পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
জোড়াসাঁকোর ধারে

পরিচিত। অন্য সব চোখের উপর দিয়ে ভেসে গেল। তাই বলি, পূর্বজন্মের স্মৃতি থাকে হয়তো।

 লোকে বলে, যে তারাকে দেখি চোখে সে তারা লোপ পেয়ে গেছে বহুযুগ আগে। তার আলোর কম্পনটুকুই দেখছি আমরা আজ তারারূপে। আমার মনও কি তাই। প্রাণের সেই বহুযুগ আগে লোপ পেয়ে যাওয়া কম্পন ধরে দিচ্ছে আজকের ছবিতে লোক-চোখের সামনে। আর্টিস্টের মনের হিসেব আর কাজের হিসেব ধরতে চাওয়া ভুল। ‘শাজাহানের মৃত্যুশয্যা,’ লোকে কেন বলে এত ঠিক হল কি করে? আমিও ভেবে পাইনে। কি জানি, কোনোকালে কি ছিলুম সেখানে। বুঝতে পারিনে। যেখানে থাকি, যার সঙ্গে উঠি বসি, বাস করি, তার ছবি আঁকা সহজ। কিন্তু যেখানে যাইনি, যা দেখিনি, সেখানকার এমন সঠিক ছবি আঁকতে কি করে পারলুম? এমনি হাজার ছবি, হাজার মুখ, মন ধরে রেখে দেয়। অনেক সময়ে আঁকি, বুঝতে পারিনে আমি আঁকছি কি আর কেউ আঁকাচ্ছে।

 এখানে ঘুরে ফিরে সেই কথাই আসে—

কালি কলম মন
লেখে তিন জন।

এই তিন নইলে ছবি হয় না।

 ওরে বাপু—

আঁখি যত জনে হেরে
সবারে কি মনে ধরে?

 চোখ যত জিনিস দেখছে সে বড় কম নয়। কিন্তু সব কি আর মনে ধরছে। তা নয়। মনের মত যা তাই ধরছে, সেইগুলিই কাজে আসছে আমাদের ছবিতে। কত লোকজন, কত মুখ, অনেক সময় তারা চোখের উপর দিয়েই ভেসে যায়। সেইজন্যই বলে—

মনেরে না বুঝাইয়ে
নয়নেরে দোষো কেন?

 চোখে মনে ঝগড়া।—মন বলে, ‘চোখ, তুমি ধরে রাখতে পারো না।’ চোখ বলে, ‘নিজের মনকে না বুঝে আমায় দোষো কেন।’

 মন ধরে রাখে, দরকারমত বের করে নেয়। তাই তো বলি, শেষ ছবি আমার এখনো আঁকা হয়নি। আমারও কৌতুহল হয়, কি ছবি হবে সেটা।