পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
জোড়াসাঁকোর ধারে

পার্ক স্ট্রীটে বাড়ি ভাড়া নেওয়া হল, আর্টিস্টরা কাজ করবে সেখানে; কেউ যদি ইচ্ছে করে থাকতেও পারে, এমন ব্যবস্থা রইল। আর্ট স্কুলের মস্ত হলে দু-তিনটে ছবির একজিবিশন হল। উড্‌রফ তার জাপানি প্রিণ্টের কালেক্‌শন দিলেন। Gesiking বলে এক মেম সব ঋতুর ফুল এঁকেছিলেন দেশি ধরনে, তাও একবার দেখান হল। দেখতে দেখতে আমাদের সোসাইটি খুব জমে উঠল। মাৰ্চেণ্ট কমিউনিটি, সিভিলিয়ান কমিউনিটি, লাটবেলাট জজ-ম্যাজিস্ট্রেট রাজারাজড়া সবাই তাতে যোগ দিয়েছেন; সবাই কিছু-না-কিছু করছেন। উড্‌রফ ক্যাটালগ লিখতেন। তখনকার ক্যাটালগ সাহিত্য ছিল বললেই হয়। প্রতি ছবির নিচে গল্প থাকত; আমার ইংরেজি বিদ্যেয় কুলোত না, ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কোনো রকম করে লিখে দিতুম। উড্‌রফ তা থেকে ভালো করে লিখতেন।

 দেখাদেখি অন্য আর্টিস্টরা ঠিক করলেন, তাঁরা নিজেরা একটা সোসাইটি করবেন। হরিনারায়ণ বসু ছিলেন আর্ট স্কুলের ভাইস্‌প্রিন্সিপাল, বরদাকান্ত দত্ত সেকেণ্ড মাস্টার, মন্মথ চক্রবর্তী যিনি বউবাজারের আর্ট স্কুল প্রথম শুরু করেন, এই কয়জন মিলে ঠিক করলেন একটা সভা করে সব ব্যবস্থা করতে হবে। কোথায় সভা হবে। আমাকেও তাঁদের দলে টানবার ইচ্ছে; ঠিক হয় আমাদের বাড়িতেই সভা বসবে। সভার সব ঠিক, খাওয়াদাওয়ারও কিছু ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। এখন সেই সভার মধ্যেই কে কি কাজ করবে এই নিয়ে মহা তর্কাতর্কি; শেষ পর্যন্ত প্রায় তুমুল ব্যাপার। এ বলেন, ‘আমি কেন প্রেসিডেণ্ট হব’, উনি বলেন, ‘অমুক থাকতে ও কাজের ভার আমার উপর কেন’ ইত্যাদি। হল না আর শেষ পর্যন্ত কিছুই, ওখানেই থেমে যেতে হল সবাইকে। আমি বললুম, ‘শুরুতেই যখন এই রকম মারামারি তখন আমি, বাপু, এর মধ্যে নেই।’ গেল ভেঙে সব স্কীম।

 আমরা যে সোসাইটি করেছিলুম সে ছিল একেবারে অন্যরকমের। আমরা করেছিলুম এমন একটা সোসাইটি যেখানে দেশী বিদেশী নির্বিশেষে একত্র হয়ে আর্টের উন্নতির জন্য ভাববে, শুধু ভারতীয় নয় প্রাচ্য শিল্পের সব জিনিস দেখানো হবে লোকদের। তাতে এমন ব্যবস্থাও ছিল যার যা ব্যক্তিগত শিল্পবস্তুর সংগ্রহ ছিল তাও দেখানো হত। মাঝে মাঝে এক-একজনের বাড়িতে পার্টি জমত। সভ্য সবাই আসত; আমোদ-আহ্লাদ, খাওয়াদাওয়া, আর্ট সম্বন্ধে আলোচনা, সবই হত। উড্‌রফ পান পর্যন্ত দিতেন তাঁর বাড়িতে যখন পার্টি হত। পান, ফুলের মালাও চল হয়ে গিয়েছিল সাহেববাড়িতে সেই সময়ে। তা ছাড়া যে-দেশে