বাগবাজারের পোল পার হইয়া আমি শকট হইতে অবতরণ করিলাম এবং পদব্রজে অতি ধীরে ধীরে শক্তিসাধনের বাসার দিকে গমন করিলাম। পূর্ব্বেই তাঁহার নিকট হইতে তাঁহার বাসার সন্ধান পাইয়াছিলাম, সুতরাং আমায় বিশেষ কষ্ট পাইতে হইল না।
যে বাড়ীতে শক্তিসাধন বাস করিতেন সেই বাড়ীখানি ক্ষুদ্র হইলেও দ্বিতল। বাহির হইতে এক মহল বলিয়াই বোধ হইল। বাহিরে সদর দরজার ডানদিকে একখানি ক্ষুদ্র বৈঠকখানা ছিল কিন্তু সেঘরে তখন কোন লোকই ছিল না।
আমি সহসা ভিতরে প্রবেশ করিতে সাহস করিলাম না। বাড়ীর একপার্শ্বে একটা প্রকাণ্ড মাঠ ছিল। সেই মাঠে তখন অনেক লোক সায়ংভ্রমণে নিযুক্ত ছিলেন। আমিও সেই আছিলা করিয়া মাঠে পায়চারি করিতে আরম্ভ করিলাম। কিন্তু মধ্যে মধ্যে শক্তিসাধনের বাড়ীর সদর-দরজার দিকে লক্ষ্য করিতে লাগিলাম।
কিছুক্ষণ এইরূপে অতীত হইলে সহসা অট্টহাস্যধ্বনি আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। শব্দের গতি লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম, শক্তিসাধন বাবুর বাড়ী হইতেই সেই হাস্যধ্বনি উত্থিত হইতেছে। আমার অত্যন্ত সন্দেহ হইল। ভাবিলাম, যিনি ভ্রাতার আকস্মিক মৃত্যুতে একেবারে ম্রিয়মাণ হইয়া পড়িয়াছেন, তাঁহার বাড়ীতে এ প্রকার আনন্দের রোল কেন? তবে কি উহা শক্তিসাধন বাবুর বাড়ী নহে?
এইরূপ চিন্তা করিয়া আমি একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করিলাম, “মহাশয়! শক্তিসাধন বাবুর বাড়ী কোথায় বলিতে পারেন?”