পাতা:জ্ঞাতি শত্রু - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জ্ঞাতি-শত্রু।
২৯

 কিছুক্ষণ এইরূপে দাঁড়াইলে পর, আমি সেই ঘরের ভিতর হইতে বামাকণ্ঠে যেন কাহাকে বলিতে শুনিলাম, “আমার দ্বারা ও কাজ হইবে না। তুমি ব্রাহ্মণের-সন্তান, আমি বাগ্দিনী। কোন সাহসে আমি তোমায় ভাত রাঁধিয়া দিব? আমায় কি পরকালের ভয় নাই?”

 আবার সেই অট্টহাস্য। এবার কিন্তু পরিষ্কার বুঝিতে পারিলাম, শক্তিসাধনই ঐ প্রকার অট্টহাস্য করিতেছেন। অট্টহাস্য করিয়া তিনি উত্তর করিলেন, “যদি এতই পরকালের ভয়, তবে এ কার্য্যে হাত দিলে কেন?”

 কিছুক্ষণ কি ভাবিয়া রমণী আবার উত্তর করিল, “দেখ শক্তিবাবু! দশ বৎসর বয়সে আমি বিধবা হই। তাহার কিছুদিন পর তোমায় দেখিতে পাই। তুমিও কেমন আমায় দেখিতে ভালবাসিতে, প্রায়ই আমাদের বাড়ীতে যাইতে, আমার মায়ের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতে। সেই অবধি আমাদের প্রণয় হয়। তাহার পর মা মারা পড়িল, তুমিই আমায় আশ্রয় দিলে। সেরূপ বিপদে পড়িয়া আমি জ্ঞান হারাইলাম এবং তোমাকেই মন প্রাণ সমর্পণ করিলাম। ইহাতে যদি পরকালে শাস্তি পাইতে হয়, সে শাস্তি সানন্দে গ্রহণ করিব, কিন্তু ইচ্ছা করিয়া কেন ব্রাহ্মণ-সন্তানকে আমার হাতের ভাত খাওয়াইব।”

 রমণীর কথা শুনিয়া শক্তিসাধন পুনরায় বলিলেন, “তবে আমি আহার করিব কোথায়? যতদিন দাদা জীবিত ছিলেন, ততদিন তোমায় জেদ করি নাই।”

 রমণী কিছু দুঃখিত হইল, বলিল, “তুমি এক কাজ কর,— নিকটে কোন হোটেলওয়ালায় সহিত বন্দোবস্ত কর।”