পাতা:জ্ঞাতি শত্রু - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দারোগার দপ্তর, ২০২ সংখ্যা।

 যুবক অতি বিনীতভাবে বলিলেন, “হয়ত এতক্ষণ দাদার দেহ তীরস্থ করা হইয়াছে। হয়ত দাহকার্য্যও সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। যদি তাহাই হইয়া গিয়া থাকে, তাহা হইলে প্রমাণের প্রধান উপায় থাকিবে না।”

 যুবকের কথা আমি ভাল বুঝিতে পারিলাম না। মনে মনে বিরক্ত হইলাম; কিছু রূঢ়ভাবে বলিলাম, “আপনার মনের কথা কি পরিষ্কার করিয়া বলুন? আমাকে আপনি কি করিতে বলেন? কেমন করিয়া আপনার সাহায্য করিব?”

 আমি যে আন্তরিক বিরক্ত হইয়াছি, তাহা যুবক আমার কথাতেই বুঝিতে পারিলেন। তিনি অতি বিনীতভাবে বলিলেন, “দাদার মৃত্যুতে আমার যথেষ্ট অপকার হইয়াছে। তিনি আমার পিতৃস্থানীয় ছিলেন। আমি তাঁহার অন্নে প্রতিপালিত। সেই কারণে তাঁহার সহসা মৃত্যুতে আমি এক প্রকার উন্মাদের মত হইয়া গিয়াছি। কি করিতেছি, কি বলিতেছি, কিছুরই স্থিরতা নাই। আমাকে ক্ষমা করুন—আমার সন্দেহ এই যে, দাদাকে কেহ বিষ খাওয়াইয়া হত্যা করিয়াছে। কিন্তু লােকে তাহা না বুঝিয়া তিনি কলেরায় মারা পড়িয়াছেন, এই প্রকার রাষ্ট্র করিছে, আপনি এখন যাহা কর্ত্তব্য তাহাই করুন। আমার মস্তিষ্কের স্থিরতা নাই।”

 যুবকের শেষ কথায় তাঁহার পূর্ব্বের কথার অর্থ বুঝিতে পারিলাম। শশব্যস্তে জিজ্ঞাসা করিলাম, “যদি আপনার এই সন্দেহ হইয়াছিল, তবে এতক্ষণ আমায় সংবাদ দেন নাই কেন? দশটার পর আপনার জ্যেষ্ঠের মৃত্যু হইয়াছে, আর বেলা এখন প্রায় দুইটা। লাস কি দাহ হইয়া গিয়াছে বোধ হয়?”