পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৬ | ঝিলে জঙ্গলে শিকার। আরম্ভ করেছে তৎক্ষণাৎ চটিজোড়া ফেলে গাছে উঠবার পথ দেখালেন। অনুচরগণও বিনা বাক্যব্যয়ে তার পদানুসরণ করলে। এবারেও বিলম্ব হলে বিপদ ঘটত। কারণ, শালরাজ স্বীয় একাধিপত্যের ক্ষেত্রে অপরকে অনধিকার চর্চা করতে দেখে, রাজকীয় প্রাতরাশের বিঘ্নকারীদিগের শাস্তি বিধানের অভিপ্রায়ে সরােষে লক্ষের পর লম্ফ দিয়ে উদ্দাম সমুদ্রতরঙ্গের মত অব্যাহত প্রভাবে অগ্রসর হয়ে আসছিলেন। এক দিন নিঃশব্দে একটি মহিষাসুর ( Bison) অন্বেষণ চেষ্টায় তার চটিজোড়া গাছের তলায় ফেলে যান। নীচে উপত্যকায় নেমে যেতে হয়েছিল। ফিরে যখন পাদুকার সংস্থান ঠিক করতে পারেন নি তখন তার মুখে যে দুঃখের ভাব প্রকাশ হয়েছিল, তাহা আমি কখনও ভুলতে পারব না। চটির সন্ধানে রীতিমত শিকারীর দল সাজিয়ে পাঠান হল। দ্রষ্ট পাদুকা সম্মিলনে তিনি যেমন উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন, বিরহিনী পক্ষীবণিতা সুদীর্ঘ প্রবাস-প্রত্যাগত দয়িতের সর্শনে তেমন আনন্দিত হয় কি না সন্দেহ। এবারকার মৃগয়াযা এর শেষ ঘটনা বর্ণনাযােগ্য। রঙ্গভূমিতে শেষে প্রায়ই প্রহসন অভিনীত হতে দেখা যায়। আমরা কোনও কৃষকের গােলাবাড়ীতে গিয়ে পেীছেছিলাম। অতি সুন্দর পরিপাটী, চারিদিকে পাহাড়ের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেইখানে গিয়ে শােনা গেল ক্রোশ কত দুরে একটা হত্যাকাণ্ড হয়ে গেছে। অর্ধচন্দ্রাকারে অগ্রসর হয়ে আমরা অনেক খানি পথ অতিক্রম করে এসেছিলাম। কথা ছিল কপিলাশে গিয়ে বিশ্রাম করব। আর সেখান হতে সকালে সেই পঁচিশ ক্রোশ বিচিত্র সুন্দর পথ বায়ুরথে আরােহী হয়ে রেলওয়ে ষ্টেশনে প্রত্যাগমন করব। কানাদিনী তন্বী একটি গিরিনদীকে পথ ভুলিয়ে ক্ষেত্রের মধ্যে ডেকে আনা হয়েছিল। সেও এই যত্নয়ক্ষিত বিশাল প্রান্তর পথে সানন্দে গান গেয়ে চলেছিল। প্রচুর ফল ফুল শস্যে গ্রাম্য কুটীরখানি কমলালয়ের মত লক্ষ্মীশ্ৰীসম্পন্ন। বনের মধ্যে তাম্বুর নীচে, কিম্বা ভাঙাচোরা খােড়াে ঘরের আশ্রয়ে কষ্টের দিন যাপন করবার পর এই শান্তিনিকেতন ছেড়ে যেতে আমার একটুও মন ওঠেনি। অনিচ্ছাসত্বে তবুও যাত্রা। করতে হল। প্রথমে বায়ুরথে বাহিত হয়ে অত্যল্প সময়ের মধ্যেই পাঁচ ছয় মাইল পথ অতিক্রম করলাম। সেখানে গজরাজ আমার প্রতীক্ষায় ছিল। তার পৃষ্ঠে আরােহণ করে মনমন্থরগতিতে মাচানেয় কাছে উপস্থিত হলাম। আকাশে উঁদের হাট বসেছিল। চারিদিক আলােয় আলােয় যেন উথলে পড়ছিল। তার উপর বনের মধ্যে শীতের প্রকোপ অধিক ছিল না। একলাটি শান্তভাবে ব্যাঘ্রের প্রতীক্ষা করছিলাম। তার আবির্ভাবের আশা বড় বেশী ছিল না, কেননা যেমন বিলম্বে সমারােহে ও সশব্দে আমাদের আগমন হয়েছিল তাতে এ জাতীয় জীৰ বড় একটা দেখা দেয় না; গা ঢাকা দিয়েই থাকে। রাত্রি যখন নয়টা, বনপথে চন্দ্রালােকের দূর সম্পাতে মৃতমহিষের সংস্থান প্রদেশটি অস্পষ্ট অদৃশপ্রায় হয়ে এল। অদৃশ্য প্রায় কেন অদৃশ্যই হয়ে গেল ; কেবল আমার অনুভূতির মধ্যে তার স্মৃতি জাগরূক রইল। বাহিরের দৃশ্যের মধ্যে সমস্ত চিহ্নই বিলুপ্ত হয়ে গেল। ছায়ায় আত্মগােপন করে, একটা জন্তু মৃত মহিষের কাছে লঘু পদশব্দে অগ্রসর হয়ে অাসছিল। দেহগৌরব সম্বন্ধে নিশ্চিত ধারণা করা ' সম্ভব হয়নি। কিন্তু কে বলতে পারে এই শ্বাপদ জন্তুটি অপরের অপেক্ষা সাবধানী নিঃশব্দচারী কি না ? আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম, আগন্তুক মহিষটিকে ধরে টানাহেঁচড়া করছে। দেখলাম কিম্বা মনে হল দেখলাম, যেন এই ভক্ষকের ছায়ায় তার পৃষ্ঠদেশ দুরূহ চেষ্টায় পরিশ্রমে কেঁপে কেঁপে