পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার রইলাম। তার পর জেলেরা এসে আমাদের উদ্ধার করলে। পৌষের হাড়ভাঙ্গা শীতের ভাের বেলা ; তার উপর অবস্থা যা তাতে পাঠকের অবিদিত নেই ; এই অবস্থায় অর্ধ ক্রোশ পথ হেঁটে যেতে হল। দৃশ্যটি কাব্যের অনুকূল হয়নি তা বলাই বাহুল্য। রাজকবি টেনিসন কোন মৎ-ফুমারের শৈবালে আবদ্ধ হবার কথা বর্ণনা করেন নি। | আমার বন্দুক যারা গড়েছিলেন তাদের বাহাদুরী বলতে হয় যে এমন অবস্থায়ও এক বিন্দু জলও তার ঘােড়ার মধ্যে ঢুকতে পায়নি। এই বিপত্তির দুদিনের মধ্যে ম্যান্টন কোম্পানী সব কল ৰুজা খুলে সপ্তাহ কাল রেঃখ দিয়েছিলেন, কিন্তু এ ভাবের কোন চিহ্নই আবিষ্কার করতে পারেন নি। এবারের ও আর একবারের দুর্ঘটনা হতে মনে কোরমা যেন মাইপ শিকার বিপজ্জনক ব্যাপার। আমি একটা বিলের ধারে ধারে শিকার করে চলেছিলাম। গত অভিজ্ঞতা হতে জানা ছিল এর মধ্যে ক্লোন্ কোন্ জায়গা বিপদসঙ্কুল। সেগুলি আমি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছিলাম। তবে সব সময় ত আর মাটীর দিকে চেয়ে হাঁটা চলে না। বিশেষ শিকার করতে হলে উপর নজর দরকার। হঠাৎ বুঝলাম আমার কোমর পর্যন্ত কাদার পুতে এসেছে আর আমি ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছি। অসময়ে এই রসাতলে যাত্ৰা বড় বাঞ্ছনীয় মনে করিনি। বিশেষতঃ, প্রথমেই তার যে বিরস পূর্বস্বাদ পাওয়া গেল তাতে উৎসাহ বৃদ্ধি হবার কথা নয়। এই সম্ভাবনা নিবারণ করবার জন্যে আমি হাত দুটো ডানামেলা চিলের মত দুধারে যত দূর চলে সােজা করে ছড়িয়ে দিলাম। শিকারীরা আমার দুরবস্থা দেখে ভারি ভীত হয়ে পড়ল। তার মধ্যে একজন তার ধুতি খুলে আমার দিকে ফেলে দিলে আর সবাই মিলে টানা হেঁচড়া করে বােতলে এটে যাওয়া ছিপির মত আমায় তুলে বার করে আনলে। গর্তটি অবিলম্বে পূর্ণ হয়ে গেল। সে পথে রসাতলে উ কি দিয়ে দেখবার আর আমার সুযােগ হল না। | সাপের কথা যদি বল দুবার ছাড়া আমি কখনও বিষাক্ত সাপের সংস্পর্শে আসিনি। জুতা মােজা পরা থাকলে এ পরশ কিছু করত পারে না। তবু সত্যি কথা বলতে গেলে এ অবস্থায়ও আমার ভয় হত, কিন্তু যে দুবার দেখা হয়েছিল নদী তীরে নয়, মাঠভূমিতে। তারা কালসাপ ; মাঠের আলের । উপর শুয়েছিল। সময়ে আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম বলে ৮ নম্বরের গুলি দিয়ে তাদের খণ্ড খণ্ড করতে পেরেছিলাম। যদিও অত নিকট সান্নিধ্য সুখকর মনে হয়নি। কত জায়গায় ঘুরেছি, বিষাক্ত সাপের সঙ্গে এই দুবার ছাড়া আর একবার দেখা হয়েছিল। সেবারে আমি একটা চিতার পিছু নিয়ে ছিলাম। একটা বাঁশঝাড়ের মধ্যে চুপচাপ মােড়ায় বসে আছি, হঠাৎ পাতার মধ্যে শব্দ পেয়ে চেয়ে দেখি, আমার পায়ের কাছের গঞ্জ হতে একটি গোরুর সাপ বেরিয়ে আসছে। আমার বন্দুকে কোন কাজ দিত না। আর সাপটি এতই কাছে এসেছিল যে তাকে ঘটাতে সাহস হচ্ছিল না, পাছে সে ভয় খেয়ে আমাকে আক্রমণ করে। তাই নিঃশব্দে নিশ্চল অবস্থায় শ্বাস মােধ করে, তার গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগলাম। দুবার আমার কাছে আসার জন্য ফিরলে, আর সে সময় আমার সমস্ত শরীর সঙ্কুচিত হওয়া কিছুতেই নিবারণ করতে পারলাম না। তার পর আবার সে ফিরে শিফারীরা যেখানে ১০০ হাত দুয়ে ঘন আঁখের ক্ষেত হতে বেরিয়ে আসছিল সেই দিকে এগিয়ে চলল। এই সময় একটা ঘাসের চাল ডুড়ে তার গতিবেগ বাড়িয়ে দিলাম। এর বঙ্কিম কুটিল গতিভঙ্গী বড়ই মনােহারী, যদি না সেই সঙ্গে প্রাণঘাতী হত! আমি চীৎকার করে শিকারীদের সতর্ক করে দিলাম। সেদিনের মত শিকারের সব আশা জলাঞ্জলি দিতে হল বলে কিছুই দুঃখিত হইনি। = ক +