পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ১লা ফেব্রুয়ারি ১৯১৮। স্নেহের অলকা কল্যাণ, শিকার ব্যাপারের মােনিী শক্তি চিরন্তনী। এ সম্বন্ধে আমি Tennyson'এর ছােট নদীয় (Brook) মত অনবরত অনর্গল ৰকেই যেতে পারতাম। কিন্তু আপাততঃ শিকার ছেড়ে হাতিয়ায় সম্বন্ধে আরাে দু'চার কথা বলে’ এ পর্ব সমাধা করা ভাল। সব রকম শিকারে সব সময়ে কাজে আসে এমন এক রকম বন্দুক পাওয়া সম্ভব নয়। বহুকাল হল আমি কালা বারুদের বন্দুকের সঙ্গে ফাখতি করেছি, সেই জন্যে আর তাদের দোষ গুণ বিচার করব না। Cordite ( নিধুম বন্দুক) তার স্থান অধিকার করে বসেছে, আর যে সহজে স্থানচ্যুত হবে তার সম্ভাবনা কম। এর প্রধান সুবিধা এই যে গুলির ফলাফল তুমি স্বচক্ষে দেখতে পাও। আর পায়ে হেঁটে শিকার করতে হলে এই আগ্নেয়াস্ত্রটি সব চেয়ে নিরাপদ। লতাগুল্মসমাকীর্ণ পথে, কুয়াশায় সমাচ্ছন্ন দিনে, বারুদের ধোঁয়ায় চারিদিক আরাে যদি অন্ধকার হয়ে আসে, তাহলে পদব্রজে মৃগয়া যথার্থই ব্যসন হয়ে দাঁড়ায়। এই ধোঁয়ার প্রকাশে তােমায় আশ্রয়স্থান, আর গােপন থাকে না, বাঘ কিম্বা চিতা, মহিষ অথবা ভল্লুক, তুমি তাদের ভাল করে দেখাবার সুযােগ পাবার আগে, তারাই তােমায় দেখে ফেলে; অবাতের পরিণাম কি হল তুমি জানতে পারনা, ধোয়ায়-অন্ধকার জায়গা ছেড়ে তাই বেরিয়ে পড়া সমূহ বিপজ্জনক। বিশেষ যখন শিকার ও শিকারীর সংস্থান দুয়ে নয়, সন্নিকটে। • অনেকে বলেন আমাদের দেশের আবহাওয়া Cordite বন্দুকের অনুকূল নয়, তিন বৎসরের টোটার উপর নির্ভর করা চলে না, গুলি ফস্কান সম্ভব, কিম্বা অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর আওয়াজ হতে পারে, সেটায় বিপদের আশঙ্কা আরাে বেশী। আবহাওয়ায় উপর দোষ না চাপিয়ে এলে শিকারীর ইচ্ছাকৃত অনবধানতার উপর দোষ দেওয়াই অধিক সমীচীন। এ সম্বন্ধে আমার কুড়ি বৎসরের অভিজ্ঞতার কথা তােমায় বলতে পারি। আমি যখন কার্তুজ আনাই তখন যাদের কাছে কিনি দেয় বলে রাখি তঁারা টোটাগুলি এমন বাক্সে ভরে সাজিয়ে পাঠাবেন, যে বাক্সে একেবারে বায়ু চলাচল রহিত। এসব আমি আবার ফ্লানেলের আয়-দেওয়া চামড়া কিম্বা ওক কাঠের পাত্রে ভরে আমার water proof বন্দুকের আলমাইরায় রেখে দি। হিংস্র জন্তু শিকারে বেরবার অব্যবহিত পূৰ্ব্বে একটা করে টাটকা পুলিলা খুলে নি, আর শিকার হতে ফিরে যা পড়ে থাকে সে সব পরে হরিণ শিকার কিম্বা আহত জন্তুর গায়ে দ্বিতীয়বার মারবার জন্যে ফ্লনেলের থলিতে স্বতন্ত্র করে তুলে রাখি। এসব কাজ চাকরের হাতে ফেলে না রেখে নিজে হাতে করা উচিত। অনেকে এ বিষয়ে চাকরের উপর নির্ভর করেন, আমি করিনা, তা সে চাকর যতই বিশ্বাসী অথবা কাৰ্য্যক্ষ কনা কেন। গুলি ফসকালে শুধু যে শিকার হাতছাড়া হয় তা নয়, আরাে কিছু দেহ-ছাড়া হতে পারে, আর গুলি যদি অনেকক্ষণ ধরে বন্দুক ছেড়ে না বেরােয় তাহলে ত বিপদ সঙ্গীন। যে সব শিকারী হাওদায় বসে কিম্বা মাচানে চড়’ শিকার করেন তারা গুলি সম্বন্ধে তেমন সতর্ক কিম্বা সাবধান হন না, কেননা তারা জানেন আশ্রয় অনেকটা নিরাপদ। তবে গুলি ফকালে কিম্বা যথাসময়ে আওয়া না হলে শরীর ও মন দুইই উত্যক্ত হয়ে ওঠে, এটা শিকারীর পক্ষে বাঞ্ছনীয় অবস্থা নয়। আমার সৌভাগ্যের পরিচয়ে বন্ধুরা আশ্চর্য হন (তোমাদের “জীব” “জীব” বলা ভাল, কিন্তু এ সৌভাগ্য