পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। রেছে, কিনারার একটি বনঝাউগাছ মরিয়া হয়ে আঁকড়ে ধরে আছে ! সেই অবস্থাতে সে মহারাজা-র গুলিতে মারা পড়ল । একবার একটা বাঘ কিম্বা চিতা যাই বল (এদের মধ্যে দামি কিছু দে দেখিনে, যদিও অনেকে এ সম্বন্ধে অনেক কথা লিখেছেন। মস্ত একটা বেতনে ঘন ঝােপে কোণঠাসা হয়ে আটকা পড়েছিল। পালাবার পথ আর একটি মাত্র ছিল, তাও আবার খালের ধারে। হেঁটো ধূতির মত কম চড়া একটা খুস্কি পথ। আমি এয়ি পাশে টুল নিয়ে লুকিয়ে তার আবির্ভাবের আশায় বসেছিলাম। শিকারীরা গরিদিক হতে বন ঘেরাও করে পিটতে পিটতে আসছিল। যি একান্ত উৎসুক হয়ে প্রতীক্ষা করছিলাম। তখন আমার অবস্থা, “পতি পত্রে, বিচলিত পদে, শফিঞ্চ দুপযান। কিন্তু কৈ ফায়াে দেখা নেই ; আর আমাকে এড়িয়ে সে পথ দিয়ে কেউ যে পালিয়ে যাবে তারও কোন উপায় ছিল না। শুধু একটিবার জলে ভারী কিছু পড়বার ক্ষীণ একটা শৰ আমার শ্রুতিগােচর হয়েছিল। কিন্তু সে এমন অস্পষ্ট যে তাতে করে অমন প্রকাণ্ড নােয়ার জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছে এ কথা মনে করবার কোন কারণ ঘটেনি। আর সে শব্দ এতই ক্ষীণ সে কিছুতেই ভাবতে পারিনি কে অরণ্য সম্রাট শাদ্দল প্রাণ রক্ষা করবার জন্যে নদীতে শেষ সন্তরণে প্রবৃত্ত। নৈরাশ্য আর বিস্ময় যুগপৎ আমার মনকে অধিকার করলে। হঠাৎ প্রহরী একজন চীৎকার করে উঠল। অন্য শিকারীদের নিয়ে সেই শব্দঅনুসরণ করে গিয়ে দেখি ব্যাঘ্র সন্তর্পণে জলে ঝাঁপিয়ে নিঃশব্দে সাঁতার দিয়ে ওপারে পেীছে চুপি চুপি পলায়নের চেষ্টায় আছে। শিকারীর চীৎকারে বাধা পেরে সবে থমকে দাঁড়িয়েছে। এখনও দেখা যায় বাঘ ১২ হাত চওড়া খরস্রোতা নদী সোজা সাঁতার দিয়ে পার হয়ে গিয়েছে। নদীর কিনারা পৰ্য্যন্ত তার পায়ের দাগ ছিল ; তারপর ধারে ধারে অনেক দূর সাবধানে হেঁটে গেছে। নিরাপদ পার ঘাট বেছে নিয়ে তবে জলে নেমেছে। সাতরে অন্য পারে যেখানে একটি গাছ জলের উপর একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল, সেইখানে কঠিন মাটি পেলে ভাঙায় উঠা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে তা সে ঠিক অনুমান করে নিয়েছিল। যদিও সােজা সেখানটিতে পৌছবার জন্যে স্রোতের মুখে সতির দিতে বিশেষ কষ্টই হয়, তবুও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। প্রাণপণ চেষ্টায় আপন অভীষ্ট সাধন করে নিয়েছিল। এই সব নদীকে সৰ্ব্বত্র সর্বথা বিশ্বাস করা চলে না। তবুও হিতােপদেশের ঐতিহাসিক বাঘের চেয়ে আমি যার কথা বলছি তার বুদ্ধি তীক্ষ্ণ ছিল। তাকে আর পথচলা পথিকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়নি। অন্য একটা বাঘ আর একবার সাঁতার দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে জেলে জালে আটকা পড়ে বিঘােরে মারা যায়। পরদিন তার মৃতদেহটা জেলেরা আমাদের বাড়ী নিয়ে এসেছিল। এরা কই, মাগুর ধরবে বলেই জাল পেতেছিল, কিন্তু এমন নতুন শিকার পেয়ে তা তারি খুসী হয়, লাভও করেনি মন্দ! তােমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদে বাড়ীর উজারে যে বিল আছে, চওড়ায় এক মাইলের উপরে হবে। যথাকালে এখানে হাঁস, চখাচখি আর গাইপের মন্ত মেলা বসে যায়। কথায় বলে, “গা দেখবি ত কলম, আর বিল দেখ িত চান !” এ বিল সেই বিখ্যাত চলন বিলের শাখা। এরি ধারে জলাভূমিতে বছর কুড়ি আগে বুনন মােষের দল রে বেড়াত।•এবার দুর্গা পূজার সময় (তখন আমরা ছেলেমানুষ) নবমী পূজার দিন, ব্রহ্মপ ভােজনের দিন, দই ক্ষীর আর এসে পেছয় না। ফলায়ে ৰামুন পাত পেতে বসে গেছেন; কর্তারা ঘরবার করছেন। একে যোন দিয়ে নৌকা করে গয়লার। দই ক্ষীর নিয়ে আসবে, এক পাল বুনো যে সেখানটিতে পথ আটক ১ ।'