পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२४ ঝিলে জঙ্গলে শিকার

make, এখানে মুসলমান পরবের ছুটি হয় না। আর তা ছাড়া সং খৃষ্টানের মত তারা একদিন ছেড়ে দুদিন কর্তব্য। বাপে সম্পূর্ণ বিশ্রাম করে থাকেন। সেবারে দোলের সময় এই সূত্রে আরও দিন কত বেশী ছুটি পাওয়া গিয়েছিল। তবে এই সব অল্পদিনের ছুটির মুস্কিল এই যে আপনাকে একেবারে ছেড়ে দেওয়া। চলে না। মনের মধ্যে কাজের ফাঁসটা টানাই থাকে, বেশ হাত পা ছড়িয়ে কিছু করা ঘটে না। শিকারের লােভে K. G. B. পথের ধারে একটা স্টেশনে এসে আমার সঙ্গ ধরলেন। রাত দুপুরে আমরা গিয়ে পৌঁছিলাম। যাদের উপরে তত্বাবধানের ভার ছিল তারা পোঁটলা পুটুলি সমেত আমাদের থানায় নিয়ে তুললেন। এমন নিরাপদ স্থানে আমাদের প্রথম আর সবেমাত্র রাত্রিবাস । লােহার গরাদে-দেওয়া বারান্দাটি স্থান-মাহাত্ম্য প্রচার করছিল। আমরা সেখানে গিয়ে পোঁছিবার পর একজন হাতে হাতে কোথায় এসেছি, সে কথা আমাদের জানালেন। শুনে আমার বন্ধুর যে হাসির ফোয়ারা ছুটল তা আর বন্ধ হতেই চায় না। তার যেন হাসির হিষ্টিরিয়া হয়ে পড়ল। আমি তাকে বােঝালাম-- Stone walls do not a prison make, Nor iron bars a cage. অর্থাৎ, --প্রস্তর-প্রাচীর হলেই কারাগার হয় না, | লৌহ দণ্ড স্থিতিমাত্রে হয় না পিঞ্জর। কারাগার হলেও নির্দোষী আমাদের কাছে সেটি শান্ত আশ্রমপদ বলেই মনে হয়েছিল। ভাের হতে না হতে আমরা মহাসমারােহে যাত্রা করলাম। প্রশস্ত রাজপথ, সুন্দর আধুনিক রথ। কিছু ক্ষণ পরে বৃটিশরাজের একজন প্রহরী আমাদের তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করলে। আমাদের অভ্যর্থনার জন্যে ঘােড়ায় চড়ে সে দশ ক্রোশ পথ এসেছিল। এর কি। 'এরই মত লােকের হস্ত এড়িয়ে যাওয়া বড় সহজ কথা নয়। তবু মনে করলাম আবার যদি এ পথে আসি তবে যেন শিকারের সুবন্দোবস্তের জন্যে এমি কারো হস্তগত হ’বার সৌভাগ্য আমার ঘটে। অতপর হস্তীপৃষ্ঠে কয়েক মাইল যাবার পরই আমরা শিবিরে গিয়া পেছিলাম। এর আগেই শিকার সন্ধানে লােক জড় করে চারিদিকে পাঠান হয়েছিল। শৈলমালবেষ্টিত যে স্থানটিতে আমাদের শিবির সংস্থান হয়েছিল সে যেন এক স্বপ্ন-রাজ্য। গােধুলির শ্যামচ্ছায়ায়, পাদপরাজি আচ্ছাদিত বনভুমি যখন স্নিগ্ধ অন্ধ কারে আবৃত হয়ে এল তখন চারিদিক হতে সাম্বর মুগের ঘণ্টাধ্বনির মত আহ্বান রব বারংবার আমরা শুনতে পেলাম। সে যেন বনের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর আরতির মঙ্গল বাদ্য ! | বাঘিনী সম্বন্ধে যে সংবাদ আমরা জানলাম, সে হচ্ছে পাঁচ ছয় দিনের বাসি খবর। আমার বন্ধু যেটা সুবিধার কথা মনে করেন নি। আমার কিন্তু তার উল্টোটাই মনে এল। তবু উৎসাহের গায়ে এমন শীতল প্রলেপ বাঞ্ছনীয় নয়, তা স্বীকার করাই ভাল। যাই হক প্রভাতেই ভাগ্যলক্ষ্মী সুপ্রসন্ন হলেন। তাঁর হাসিমুখ দেখে আমাদের মুখও হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সংবাদ এল, সূর্যোদয়ের শুভলগ্নে খানিক দুরে বাঘিনী একটী স্ত্রীলােককে ভােগে লাগাইঘার উদ্যোগ করছিল, পারে নি। সে কোন রকমে একটা পাথরের স্তুপের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে বেঁচে গেছে। নিরাশ হয়ে ব্যাস্ত্রী একটী নালার মধ্য দিয়ে অন্য পথে যাত্রা করেছে। নালার পাশের ভিজে বালিতে তার পায়ের টাটকা চিহ্ন খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আর বনের মধ্যে দিনের বেলা লুকিয়ে থাকবার জন্যে .