পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| | কিলে জঙ্গলে শিকার ২৯ অতর্কিত ভাবে তোমার উপর এসে পড়ে কাজে বাধা দেয়। নিজে কোন গাছ কি বড় পাথরের পিছনে লুকিয়ে থেকে, চারি দিকে নজর রাখবার জন্যে গাছে মানুষ চড়িয়ে দেওয়া ভাল। আর মাঝে মাঝে সম্ভবপর জায়গাগুলিতে ঢিল ছুড়ে সন্ধান নেওয়া মন বুদ্ধি নয়। তবে সময়টা যদি সন্ধ্যার প্রাক্কাল হয় তাহলে পর দিন প্রত্যুষের জন্যে প্রতীক্ষা করে থাকাই সুবুদ্ধির কাজ। আর একটি কথা বিশেষ ভাবে মনে রাখা অাবক। উৎসাহের বশে মৃতপ্রায় বাঘ কিম্বা চিতার বেশী কাছে কখনাে এগিয়ে যেতেন। এই নিৰ্বদ্ধিতার জন্যে অনেকে বিপদে পড়েছেন। চলচ্ছক্তি রহিত মৃতপ্রায় বাঘের শরীরে মৃত্যুর যথার্থ লক্ষণ তাবিদার করা সহজ কথা নয়। শরীরটা যখন একেবারে অসাড় নিস্পল দেখায় তখনও তার এক শি মেরে দেখা ভাল। নয়ত বন্দুকটা ঠিক রেখে দূর হতে বার খোঁচা দিয়ে পরখ করে নিলে ক্ষ-হ্নি নেই। তার এক শিকারী বন্ধু গল্প করেছেন বঘিকে মৃত মনে করে, হাতীর পিঠে তুলে সেধে নেবার পরও কোচ উঠতে দেখা গিয়েছে! মাহুত অঙ্কুশের আঘাতে তার উত্তমাঙ্গ চূর্ণ করে তবে রক্ষা পায়। কয়েক বৎসর আগে কর্ণেল আমায় বলেছিলেন একবার এই রকম একটা বাঘ হঠাৎ বেঁচে উঠে বাদন দড়ি সব ছিড়ে ফেলে ! হাতী আতঙ্কে অধীর হয়ে চীৎকার করতে করতে দেড় দেয়। তার পর বাঘটা পাশেই এক পাহাড়ের উপর আছাড় খেয়ে পড়ে। মাথায় শক্ত আঘাত লাগায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন এক জন তার ঘাড়ের কাছে গুলি করে তাকে নিঃশেষ করেন। পরে পরীক্ষার তাবিষ্কার হল প্রথম গুলি তার মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে নি,শুধু সামান্য একটু ছিদ্র করে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। ফলে সে কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল মাত্র। প্রথম প্রথম যখন শিকার করতে আরম্ভ করি, সেই সময়ের একটা ঘটনা হতে আমি এই অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান অর্জন করেছিলাম। গুলির আঘাতে বানটি ধরাশায়ী হবার পর ম—দাদা তাকে টেনে বার করবার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছিলেন । কিন্তু চেহারা দেখে তার মৃত্যু সম্বন্ধে আমি তখনও নি:সন্দেহ হতে পারি নি। আমার অনুরােধে নিতান্ত অনিচ্ছায় তিনি তার উপর আর এক গুলি মারতেই এই মৃতবৎ জন্তুটি হুঙ্কার ছেড়ে স্ফ দিয়ে উঠে তবে পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হল ! ভাগ্যবশতঃ আমরা পশ্চাতে ছিলাম। নতুবা শুধু তর্কের মীমাংসা নয়-- -সম্বর সদগতির পথে সে আমাদের অগ্রসর করে দিত! আর এক বার এমন অবস্থার পরিণাম কিন্তু শুভ হয় নি। শিকারীরা এসে চারি দিকে ভিড় করে দাড়িয়েছে। দুই এক জন উৎসাহ যুবক বাঘটিকে টেনে বার করবার জন্য উৎসুক। দীর্ঘ বর্ষা দিয়ে বেত বনের মধ্যে বার বার খোঁচা দিচ্ছে। এই ব্যবহার আমার মনােমত হয়নি। তাই আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম। যে জন্তুটিকে একেবারে বাসি এড়া বলে বােপ হচ্ছিল চক্ষের পলকে ঝাঁপিয়ে উঠে সে আমাদের আক্রমণ করলে ! যেন তার কিছুই হয় নি! ভাগ্যে আমি এগিয়ে ছিলাম। বন্দুকের মুখ তার মুখের উপর রেখে সম্বর্ধনা করলাম। তাকে আর এগোতে হলো না। যে সব শিকারীরা এতক্ষণ লম্ফঝম্প করছিলেন আতঙ্কে পালাবার পথ দেখতে না পেয়ে গাছের গুড়িতে নাথ: ঠুকে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। আর যারা বেতবনের মধ্য দিয়ে পালাবার চেষ্টা করেছিলেন তাদের সর্বাঙ্গ বেতসের আলিঙ্গনে রক্তরাগে সুশােভিত হল। তঙ্গী এই বনবল্পরটি পত্রবিহীন, কিন্তু প্রসারিত কণ্টকিত শাখা বাছ দিয়ে যখন স্বাগত জানায়, সে হর্স পশে আগন্তুকের দেহে অষ্ট সাকি, ভাবের আবির্ভাব