পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬ | ঝিলে জঙ্গলে শিকার । । তবে সব কিছু বর্ণনা করে বােঝন সহজ নয়। বরাহ দম্পতির মধ্যেও স্ত্রী-পুরুষের পার্থক্য বিশেষ অভিজ্ঞ শিকারী ডিয় নবীনের চক্ষে পড়ে না। এই কারণে সে বরাহ জ্ঞানে অশ্বারােহণে র পশ্চাৎ ধাধন করে অনেক সময় সেটাকে শূকরী আবিষ্কার করে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। ষােড়শ বর্ষে পদার্পণের পুর্বে বন্দুক ব্যবহার করতে শিখে অবধি একাল পর্যন্ত আমি এই বিচিত্র চিত্ৰক অনেক - শিকার করেছি। সেই তরুণ বয়সেই দুচারটি আমার গুলিতে পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হয়। আমার অরণ্য বিদ্যার উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে ইংলও প্রবাসের তিন বৎসর ছাড়া অদ্যাবধি বাঘিনী আর ব্যায়শিশুর সম্বন্ধে বন্দুক সম্বরণ করেও এখন আমার নিয়মিত বার্ষিক শিকারে যত গুলি বাঘ মেরে আনি আমি প্রতি বৎসরই তত গুলি করে চিত মেয়েছি। আমি জানি কোন একটা লােক যিনি আপন জমিদারীতে সর্বেসর্বা, সময়ে অসময়ে যখন ইচ্ছা তখন নিৰ্বিচারে চিতা বাঘ, গণ্ডার, মহিষ শিকার • করে সে প্রদেশটাকে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর বন্দুক আর বল্লম হতে যে জীবটা আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে সেও যে কোন্ সুদূর দেশে পলায়ন করেছে তার অর সন্ধান পাওয়া যায় না। আমরা বিশ্বাস করি “সবুরে মেওয়া ফলে,” তার বিশ্বাস ছিল অন্য রকম তাই তিনি সব নিঃশেষ করে ফেলেছেন। ষাট ষষ্টির দাস” আমাদের স৩ ভাইয়ের মধ্যে যে সামান্য জমিটুকু আছে তাতে বন জঙ্গল, খাল, বিলের অভাব নাই। এখানে ব্যাঘ্ৰ বরাহ বিচরণ করে, অসংখ্য হংস-কাণ্ডব অাননে বিহার করে। যখন আমার সারা হয়ে তােমার সুরু করবার বয়স হবে, তখন উত্তরাধিকার স্বত্বে প্রাপ্ত তােমার পুরাতন প্রিয় জমিদারীতে দেখবে আমি অনেক ছােট বড় শিকার তােমার জন্য রেখে দিয়েছি। | সারা দিন গম্ভীর হয়ে মুখ হাঁড়ি করে থাকা আমার পছন্দ হয় না। কবির পােষা বেঙ্গালটীর মত শান্ত ধীর গম্ভীর জীবকে আমি প্রশংসার চোখে দেখিনে। একবার বনের মধ্যে তঁাবুর পাশে আমরা যখন সবাই মিলে আগুন পােষাচ্ছিলাম সেই সময় একজন শিকারী গল্প করেছিল।—একবার একটা বন্ত মার্জারবর, বংশ গৌরবে তার চেয়ে অনেক উচু একটী চিতা-গুছিতাকে বিবাহ করেছিল, কুমারীর অভিমতে। পিতৃহীন মানব ভিন্ন মানুষের মধ্যে এই সৌভাগ্য সাধারণের পক্ষে সুলভ নয়। এই অপূৰ্ব্ব ঘটনা কেমন করে সম্ভব হল বল দেখি? এ সব জীবের মন ত কথায় ভেজান যায় না। তবে দিনরাতই যে বাঘিনী, তাকে মার্জারপুঙ্গব মােহের বশীভূত করলে কিসে? স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে এখন সব লােকের বাক্যবিন্যাস সুরুচির পরিচায়ক নহে। সে চিত্ৰক কন্যারই নিদাবাদ করলে। এমনটা যে সচরাচর ঘটে তা নয়, তবে এ ক্ষেত্রে অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল। যে গৃহস্থের ঘরে এই বিড়ালবীর লালিত পালিত হয়েছিল তার এমন অবস্থা ছিল না যে, ঘরের ছেলেদের দুধ দিয়ে আবার বিড়ালের জন্যও কিছু রাখতে পারে। অবস্থা বােধ হয় “একপে দুধ কিনেহি কি হবে তা বল না ?” সেজন্য দুধ টুকু ধামাচাপা রাখা হত। বাড়ীর গিন্নী ভাল গুলি অন্য কাজে লাগিয়ে ভাঙ্গাচোরা ধামতেই এ কাজ চালাতেন। আধ আড়ালের মধ্য দিয়ে যা কিছু দেখা যায় শুনেছি তার প্রলােভন সমধিক ; অন্তত মার্জারশ্রেষ্ঠ সেইরূপই মনে করেছিল। কাজের পরিণামের বিষয় কিছুই বিবেচনা না করে ভাঙ্গা ধামার মধ্যে গলা গলিয়ে দিয়ে দুধটুকু ত সে নিমেষে নিঃশেষ করলে। কিন্তু ধামাটী যে সেই গলা ধরে রইল কিছুতেই আর ছাড়ল না। এই আদরের আধিক্যে তার পাঁচ পরাণ আসি যাই করলে ও তার নিষ্কৃতি হল না। সবাই তাকে দেখে হাসে। মাঘ মার্জার কেউ রেয়াত করে না। সবাই দুর ছাই