পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার । মস্ত বড় উঁদ, চারি দিকে ফুটফুটে জ্যোৎস্না! কিন্তু বাঘ যে ছায়ায় ছায়ায় ফিরতে লাগল তাকে আর স্পষ্ট দেখতে পেলাম না। তার চলা ফেরার শব্দ কাণে আসে, কিন্তু তাকে দেখা যায় না। আমরা আরাে ভালাে সুযােগের প্রতীক্ষায় বসে রইলাম। ইতিমধ্যে আমাদের পিছন হতে এক বরাহ এসে উপস্থিহ। বলা কওয়া নেই, এসেই বাঘকে আক্রমণ করলে। “যুদ্ধং দেহি” বলবার সাহস তার আর হল না। লাঙ্গুল সঙ্কোচ করে অবিলম্বে পলায়ন দিলে। এ ব্যাপার ভারি নূতন। শিকার সম্বন্ধে R'এর অভিজ্ঞতা অনেক হলেও, তিনি কি আমি এমন ঘটনা ইতিপূর্বে আর কখন দেখি নি কিম্বা শুনি নি। শূকরটী নির্বিবাদে সেই গাভীর মৃতদেহে মুখ প্রবেশ করিয়ে মনের সুখে আহারে মনােনিবেশ করলে। অনেকক্ষণ ধরে আহার আর শেষই হল না। ইতিমধ্যে বাঘ আবার ফিরে এসে যেই তার ন্যায্য আহারে প্রবৃত্ত হল অমি শূকর আপন মুখের গ্রাস শেষ করে আবার তাকে তেড়ে গেল। সেও দৌড় দিলে, একবার দুবার নয়, চার চার বার এই একই ব্যাপার ঘটল। অত্যন্ত শীত ছিল। আমরাও মিছামিছি বসে বসে শ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই দুজনে পরামর্শ করে ঠিক করা গেল, দেখাযাক বা না যাক, বাঘটী যেখানে আছে মনে হচ্ছে সেই দিক লক্ষ্য করে গুলি করা হক, তার পর ভাগ্যে যা থাকে। হাতী এগিয়ে আবার জন্যে আগেই সঙ্কেতসূচক বন্দুকের আওয়াজ করেছিলাম। অপেক্ষা করতেই হত তাই মনে হল এ মুক্তি মন্দ নয়। | R আমায় হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলেন, “তােমার পায়ে আঘাত লাগল কি ?” আমি বল্লাম, “না, কেন বল দেখি” ? তিনি বল্লেন আঁর বন্দুকের নলী ফেটে গেছে। ফিরে দেখি, হাড়-গিলের ঠোঁটের মত বন্দুকের নল ফেটে হাঁ হয়ে রয়েছে ! বন্ধু বল্লেন বন্দুকের দোষে এমন হল। আমি বল্লাম ঠিক দোকানে কেন নি, গুলটা বদ। মীমাংসা আর হল না, তবে দোষ যারি হ’ক যে দোকানে বন্দুক কেনা হয়েছিল তারা নল বদলে আবার এক জোড়া নূতন দিলে। পরের দিন দেখি কি, গুলি বাঘে না খেয়ে মরা গরুর উদরসাং হয়েছে। শুকরটী, মৃত গােমাংসের সঙ্গে তার জঠরস্থিত “পল্লব দুৰ্বাল অনেক পরিমাণে অাহার করেছে দেখলাম। কি মনে করে, কে জানে ? আমিষের পর নিরামিষ ব্যবস্থায় পরিপাকের সম্ভাবনা বুঝি অধিক? শূয়ােরে মুত জন্তুর মাংস ভােজন করে, এ কথা আগেই শুনেছিলাম, কিন্তু সেই সঙ্গে যে ঘাস বিচালীও খায় এ তথ্য নূন সংগ্রহ হল। বরাহনীর প্রকাণ্ড শরীর, হয়ত বা পূর্ব হতে তাড়িত ব্যাঘ্রের সঙ্গে কোনরূপ মধুর সম্বন্ধ ছিল। নয়ত মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে এমন উপহাস করা বড় একটা শােনা যায় না। ১৫ই ডিসেম্বর ১৯১৭। স্নেহের অলকা কল্যাণ ! | পায়ে হেঁটে বাঘ ভালুক শিকার করবার সময় যদি সতর্ক হওয়া আবশ্যক হয় তাহলে চিতা শিকার করবার সময় আরাে অধিক সাবধান হওয়া দরকার। একতত এরা বাঘের চেয়ে চতুর ; তা ছাড়া গাঁয়ের আনাচে কানাচে কুকুর ছাগল ধরে নেবার ফনীতে ফেরে। মানুষের সঙ্গে চেনা পরিচয় আছে বলে তাকে বড় একটা ভয় করে না। চলা ফেরাতেও চটপটে। খুব শীগগির পালাতে বেশ পারে। তােমার তাবুতে কুকুর যদি থাকে তাহলে চিত। একবার এসে দেখা দেবেই আর সুবিধে করতে পারলে সেটিকে নিয়ে অন্তর্ধান হবে। এই ব্যাপারের সব চেয়ে সুন্দর সুভিনয় যে দেখে । ।।।