পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝলে জঙ্গলে শিকার। যে উপর নীচে দুই বনই নজরে থাকে। নদীপার হতে জায়গাটা কিছু দূরে। এর সম্মুখে খােলা মাঠ খানিকটা ছিল, কিন্তু সেখানে দাড়ালে আমাকে ক্ষেত পাহারা দেবার খড়ের মানুষের মত দেখাত। সে মূর্তি শােভনও নর নিরাপদ নয়। তাই আর অন্য আড়াল না পেয়ে আমি একটা বাঁশঝাড়ের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। একজন শিকারী ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ঝােপের মধ্যে এক চাবলা মাটী ছুড়ে মেরে বাঘটাকে বের করলে, তা আমি দেখতে পেলাম। অল্প ক্ষণের জন্য সে এসে পাড়ের উপর দাড়াল, পিছনে তার বেতবনের ঘন সবুজ পৰ্দা, থেকে থেকে দুলছে। এ ভাবে মুহূর্তের জন্যে ছবির মত স্থির হয়ে যখন সে দাঁড়িয়েছিল, তখন তাকে বড় সুন্দর দেখাচ্ছিল। শিকারীরা যে দিক হতে তাড়া করে নিয়ে আসছে সে দিকে গুলি করা নিরাপদ নয়। তাই সেদিক্কার গতিবিধি বন্ধ হবার অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় সে আমাকে দেখতে পেলে। আর যাবে কোথায়, হুঙ্কার ছেড়ে লাফাতে লাফাতে আমার দিকে আসতে লাগল। এমন ঘটনা আমার শিকারী-জীবনে বড় বেশী ঘটে নি, কিন্তু যখনই ঘটেছে তখনই আততায়ী জন্তুটির ও আমার মাঝখানের সব রকম বাধা ব্যবধান সম্পূর্ণরূপ দুর না হলে আমি কখনও বন্দুক ছুড়ি নি। বাঘ ভাল্লুক কিম্বা চিতা যখন তােমায় এমন ভাবে তাড়া করে আসে, তখন তুমি যদি উ”চুতে না থাক তা হলে লক্ষ্য ঠিক রাখা বড় কঠিন। সম্মুখে অবশ্যম্ভাবী সমূহ বিপদ নিশ্চিত জেনে লক্ষ্য যতই স্থির, মুষ্টি যেমনই দৃঢ় হউক না কেন, হাত এক আধটু কেঁপে যাওয়া বিচিত্র নয়। আমি তখনও বন্দুক ছুড়ি নাই, গুলি সম্বরণ করেই আছি। আর এক লাফ দিলেই সে আমার বন্দুকের নলের উপর এসে পড়ে। এমন সময় হঠাৎ ডান দিকে বেঁকে কিছু দূর গিয়ে গর্জে উঠে আমার দিকে মুখ করে খেকাতে লাগল। সেই সময় আমি গুরি লাম, কিন্তু সম্মুখের একটা বাঁশে লেগে সে গুলি পাশ কাটিয়ে গেল। আর এক গুলি ছুড়বার আগেই ব্যাঘ্রবীর সত্বর জঙ্গলের মধ্যে পলায়ন করলেন। তবে কি আমাকে শুধু ভয় দেখাবার মতলবে ছুটে এসেছি, না আমায় খাতির নদার দেখে নিজেই ভয়ে পৃষ্ঠভঙ্গ দিল? | লােকে বলে বাঘের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকলে সে ভয় পায়, আমি কিন্তু এ কথা বিশ্বাস করি না। তুমি বহু চেষ্টায় চোখের দৃষ্টিতে যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় কবে, বাঘ কিম্বা চিতার চোখে স্বভাবতঃই তার চেয়ে অধিক শক্তি আছে। মানুষের চাহনীতে চমকে যাবে সে প্রকৃতির জন্তু তারা নয়। কিছুই যেন হয় নি এমনতর উদাসীন ভাবের অভিনয় করবার জন্যে বহু শিক্ষা ও কালের অভ্যাস আবশ্যক। পাশ দিয়ে বাঘ চলে গেল অথচ তােমার শরীরের কোথাও একটু কাঁপল না, বীরাসনে অটল হয়ে রৈলে, এটি মৃগয়াক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ব্যতীত হয় না। আমি দেখেছি ফল যদি কিছু পাওয়া যায়, তবে সে এমনতর নির্ভীকতার জোরেই হয়। কতবার এই অবস্থায় বাঘ আমায় পাশ দিয়ে চলে গেছে আমি চঞ্চল হই নি, শত্রুতাচরণের জন্যে কোন ব্যাগ্রতা দেখাই নি, শেষে সময় বুঝে ধীরে সুস্থে আপন মতলব হাসিল করে নিয়েছি। বাঘের সম্মুখ দিয়ে অকস্মাৎ অন্য দিকে চলে গেলে কোন ক্ষতি হয় না। তবে সবই পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ; কেননা বাবও অনেক সময় এমন চট করে তোমার দিকে ফিরে দাড়ায় যে গুলি কবর সুযােগই পাওয়া যায় না। আমি যে স্থির ধীর হয়ে বসে থাকবার বিধান দিয়েছি সেইটাই সব চেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়। এতে তার মনে কোনরূপ সন্দেহের উদ্রেক হয় না। আর তুমি যদি কিছুক্ষণ প্রতীক্ষা করে গুলি কর তাহলে প্রায়ই নিরাশ হবার কারণ ঘটে না। যেখানে সহসা বাঘের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হবার সম্ভাবনা । । । ।