পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ | ঝিলে জঙ্গলে শিকার | T 1 নালা দিয়ে, আর মােহনলাল অন্যটাতে “বীপ ভরে কাঁপারে মেদিনী” অগ্রসর হচ্ছিল। আর জঙ্গল পিটাবার ভার যাদের উপর ছিল তারা এই দুইএর মধ্য দিয়ে উ চু জমি দিয়ে চলেছিল। দুই নালায় মােহনায় আমার বসবার জায়গা। সেখান হ’তে দুই হাতীর এগিয়ে আসাই দেখতে পাচ্ছিলাম। মােহন সাবধান সতর্ক, মাঝে মাঝে শুড় বাড়িয়ে দূরে আঙ্গাখা পরিধানী জীবটীর খোঁজ নিচ্ছিল। সে লাথি মেরে ঝুড়ি ঝুড়ি মাটী চারি দিকে ছড়িয়ে ফেলছিল। তাতে কিন্তু বাঘটা কিছুমাত্র বিচলিত হয় নাই। মােহনলালের এই “খবরদায়” সে যে কিছুমাত্র গুহি করেছিল তার আভাস টুকুও পাওয়া গেল না। যে ভাবে মােহনলাল তার থামের মত পা তুলে আবার ফেলছিল, সেটা দর্শনীয় ব্যাপার বটে। তবুও দেরী হচ্ছে বলে আমি অধীর হয়ে পড়ছিলাম। এমন সময় মােহন পাশের গাছ হতে একটা ভাল ভেঙ্গে নিল। আমি ভাবলাম ওরে লোভী!” কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই আমি বুঝতে পারলাম যে ক্ষুধা নিবারণ কিম্বা রসনার পরিতৃপ্তির জন্য এ কাজ সে করে নাই। শুড়ে করে ডালটা ধরে ঘুরিয়ে এনে সে এমনই জোরে ঝােপটীর উপরে মারলে যে চিতাবাঘ আচমকা হুড় মুড় করে ঠিক আমার সামনে এসে পড়া ! আমাদের প্রতিবেশীর একটি প্রকাণ্ড দাতাল হাতী ছিল। (মফস্বলে যার। আমাদের ৮১০ ক্রোশের মধ্যে বাস করেন তাদের আমরা প্রতিবেশী বলে থাকি)। এই হস্তীপ্রবর ভাল শিকারী না হলেও আশ্চৰ্য্য দাঙ্গাবাজ ছিল। ধানকাটা, জমির সীমানা সাব্যস্ত নিয়ে যখনই লড়াই বাবত তখনই আমাদের এই প্রতিবেশী জমিদার লড়াই ফতে করে ফিরতেন। বিপক্ষে লাঠিয়াল যেমনই চতুর হক না কেন “কালীগজ” যখন ওড়ে করে প্রকাণ্ড এক খানা বাঁশ ঘােরাতে ঘােরাতে “যুদ্ধং দেহি” বলে অগ্রসর হত, তখন আর সকলে রণে ভঙ্গ না দিয়ে পারত না। যে হতভাগ্য কালীগজের এই বাঁশের, বাঁশী নয় গদার, প্রকোপে পড়ে যেত তার দুর্দশার সীমা পরিসীমা থাকত না। এই বিখ্যাত কালীগজ আজ ইহলােকে নেই! অযথা উপায়ে জীবিকা উপার্জন করাই ছিল তার জীবনের নিয়ম। আর তার এই নিশাচর অভ্যাসদোষের জন্য মনিবকে অনেক অর্থদণ্ড দিতে হত। ইক্ষুদণ্ডের প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব সর্বজনবিদিত। সে একবার শ্ৰীযুক্ত—মহাশয়কে এমনই ভয় দেখিয়েছিল যে সে গল্পটা তােমাদের শােনা উচিত। তখন বড়দিনের সময়। শেষরাত্রের দিকে বন্ধুর আর্ন্ত চীৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমটা আমি মনে করেছিলাম ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝি, কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে হাতীর পায়ের আওয়াজ পেয়ে বােঝা গেল যে কেমন করে তারা ছুটে গেছে। পাঁচটা হাতী নিরঙ্কুশ অবস্থায় ছুটে বেড়াচ্ছিল ; এদের মধ্যে পরিমিত ইক্ষুপ্রিয় কালীগজও ছিল। তাকে এ ভাবে বেরিয়ে পড়তে দেখে আর সকলেও তার পদাসরণ করেছিল। জজের পরচুলা যে মাথায় থাকে সে ব্যক্তি সুখে নিদ্রা যেতে পারে না। শ্রীযুক্ত--মহাশয় অন্ততঃ তাই মনে করতেন। আসন্ন বিপদ হতে আপনার মস্তকটিকে, সঙ্গে সঙ্গে হাইকোর্টের পতন, রক্ষা করবার জন্যে তিনি এ ভাবে চীৎকার করেছিলেন। ক্রমে হীদের তিরােধানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আকুলতার বিরাম হ’ল। পর দিন সকালে প্রগাঢ় নিদ্রার জন্যে আমায় অনেক উপহাস সহ্ করতে হল। কিন্তু বিপদের কোন সম্ভাবনাই যখন কোথাও দেখা যায় নি তখন শীতের রাতে লেপের লােহাগ ফেলে কে উঠতে চায় বল ? যে ব্যক্তি হাতী ভাল বাসে না, সে হয় স্বর্গদু, নয়ত নিম্ন শ্রেণীর মানুষ। আমার, হস্তী-প্রীতি