পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলে জঙ্গলে শিকার ৪৭ ৭ . . . এমনই অসীম যে আমি যদি অবাধে তাদের প্রসঙ্গে কথা কইতে পেতাম তা হলে কথা আমার ফুরত না। আত্মরক্ষায় কিম্বা পাগলা হাতী না হলে, আমি কখনও গজহত্যা পাপে লিপ্ত হব না, নিশ্চয়। সেই জন্যে আমার এ ভালবাসা গোপনে পোষণ করা ভাল, আর মাঝে মাঝে সস্নেহে তাদের কথা উত্থাপন করে অন্তরের সঙ্গোপন অনুরাগ-শিখাটিকে উদ্দীপ্ত করাও চলবে। বহু দিন পূর্বে কটক জিলায় শিকারক্ষেত্রে একটি যে ঘটনা ঘটেছিল তার উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না বােধ হয়। আমরা ছিলাম তিন জন। আর যাকে পাহাড়ে বলে হাতীপথ, বসন্তের এক প্রভাতে চৈত্র মাসে সেই পথে অগ্রসর হচ্ছিলাম। যারা বন পিটিয়ে শিকার করে তারা আগেই যাত্রা করে পাহাড়ের অপর পার্শ্বে পেীছেছিল। আমরা দুচার জন অনুচর সঙ্গ করে আমাদের বন্দুক চুড়বার উপমুক্ত জায়গাগুলির দিকে চলেছিলাম। এখানে সেখানে একটা বাঘের পায়ের দাগ চোখে পড়ছিল। আর এক দল হাতী,যে সেই পথে পাহাড়ের দিকে গেছে, তাও স্পষ্ট বুঝা গেল। ছােট বড় পায়ের দাগ অনেক, তার উপর এখানে একটা গুলি বাঁশ, ওখানে একটা মচকান গাছের ডাল তাদের গতিবিধি বেশ ভাল করেই জানিয়ে দিচ্ছিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা দুরে নীচের উপত্যকায় পাশের নিবিড় ঘন বনের মধ্যে তাদের দেখতে পেলাম। তারা যে অনেকগু'ি, কলরবেই তার আভাস পাওয়া গেল। তাদের উপস্থিতি বাঘটিকে বনের অন্তরাল হতে তাড়িয়ে হিরে আনবার অন্তরায় ঘটাবে কি না আমাদের মধ্যে তখন সেই তর্ক উঠল। | Bison ছাড়া আর কোন বন্য জন্তু হস্তিদলের সঙ্গে মেশে না। এই বিপুলায়তন জীবগুলির চল ফের আনাগােনা দেখে আর সব জানাের ভড়কে যায়। গুলির আওয়াজ করলে তারা ছড়িয়ে পড়তে পারে ; তাই স্থির হল গুলিই করা হউক। গুণি কার কিছু আগেই আমাদিগকে বিস্ময়বিমূঢ় করে অকস্মাৎ গুরু গুরু শব্দ হয়ে সমস্ত পাহাড়টি নড়ে উঠল,গাছপালা থর থর করে কাঁপতে লাগল, পাহাড়ের ভিত্তিভূমি টলিয়ে দিয়ে প্রচণ্ড ভূমিকম্প আরম্ভ হল। অময়ে সহসা যেন প্রলয়কাল এসে উপস্থিত হল ! মস্ত মস্ত পাপর, পাহাড়ের ভগ্নাংশ, চারি দিক হতে গড়িয়ে আসতে লাগল। ভীত বানরের দল ও হরিণের পাল যে যেখানে দিয়ে পারে দৌড়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নীচে নামতে লাগল। পাখী আর পতঙ্গের কাতর বিকৃত কণ্ঠে চীৎকার করে, চারি দিকের কলরব আরও বাড়িয়ে তুললে। ইতিমধ্যে নীচের উপত্যকায় হস্তিস শুণ্ড আস্ফালন করে হুঙ্কার করতে করতে একযােগে পলায়নের উদ্যোগ করলে। . প্রত্যেক অরণ্যবাসাই কেমন করে বন ছেড়ে খোলা মাঠে চিয়ে পৌছিতে পারে, , সেই চেষ্টায় উদ্যেগী হল। মিনিট কিম্বা তার চেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই এ ব্যাপার ঘটল। সময়ের পরিমাণ আমার স্মরণ নেই, তবে সময় যতটুকুই হ’কনা অবস্থা যে বিশেষ সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছিল, নিঃসন্দেহ। কি অদ্ভুত দৃশ্য, কি অপূর্ব অভিজ্ঞতা ! জীবনে আর কখনও এরূপ ঘটবে কি নাসন্দেহ। আমরা ধীরে ধীরে শিবিরে ফিরে এলাম। প্রকৃতির দুর্বোধ, নির্দয় খামখেয়ালিতে আমাদের সেদিনকার শিকারের আশা একেবারে মাটি হয়ে গেল। গল্প আবার শুরু করা যাক্। বাঘ যদি একবার শিকার ব্যাপারের পরিচয় পেয়ে থাকে তাহলে ভারি চতুর হয়ে ওঠে। আমি অনেকবার দেখেছি, আত্মগােপন করবার উদ্দেশ্যে জঙ্গল যার। পিটোয়। তাদের হাত এড়াবার জন্যে, বাঘ অন্তরালবিহীন বিরল বনে গিয়ে লুকোয়, আর সন্দেহজনক কোনরূপ শব্দ শুনমাত্র সেখান হতে পলায়ন করে। যদি তাদের লুকাবার জায়গাটা তুমি কোনরূপে বুঝতে