পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার রেখেই সে চলে গিয়েছিল, কিন্তু তবু নখ দিয়ে অচিড়ে কেটে আপন আগমনের নিদর্শন রেখে যেতে ভুলে যায় নি। এ ব্যবহারের উদ্দেশ্য কি? সে যে আমাদের কাণাকড়ির পরােয় রাখে না, সেইটে জাহির করবার জন্যেই কি পায়ের নখের লেখায় সে কথা প্রকাশ করে গেল? যদিও এবারেও আমরা তাকে খুজে পাই নি। তবু সে বেশী দূরে ছিল না, তাকে খুঁজে বার করবার চেষ্টা বিফল হল। শিকার খুঁজে বার করা যাদের কাজ তারা বাঁশ ঝােপের পাশেই বেরিয়ে আসবার পথে আমরা যে পথ ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম তার একটু তফাতে বাঘের পায়ের টাটকা দাগ দেখতে পেয়েছিল। সেখান হতে চুপি চুপি বেরিয়ে সে পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা দুএকটা সম্ভব জায়গায় তার খোঁজ করেছিলাম কিন্তু নাগাল পাই নি। পর দিন সে আরও একটু কাছে এসে ছিল সত্যি, কিন্তু যারা বন পিটিয়ে শিকার উটকে বার করে তারা তার খোঁজ করতে পারে নি। পরে আবিষ্কার হল সে জলচর বৃত্তি অবলম্বন করে একটা খাড়াই পাড়ের উপর আশ্রয় নিয়েছে। এদের জাতীয় জীব এই রকম জায়গায় আস্তানা করতে ভারি ভালবাসে। একটা বাঁশের ঝাড়ের আড়ালে আমি বসেছিলাম। সেখান হতে বিশ হাত দুরে মােড় হতে বাঘের আবার রাস্তা দুটো দুধারে চলে গিয়েছিল। এখন সমস্যা দাড়াল, যদি সে বামমার্গ অবলম্বন করে তবে ঝােপের আড়ালে থেকে বেশ একটু দূরে হতেই গুলি চালান চলে ; কিন্তু যদি দক্ষিণ মার্গের পথিক হয় তবে হয়ত হাত দুএক ব্যবধানে একেবারে প্রায় বন্দুকের নলের মুখে এসে পড়বে। যখন খােলা জায়গা দিয়ে দুলকি চালে এগিয়ে আসতে লাগল তখন সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে আমি যে ইচ্ছা করেছিলাম তা ঘটল না। বাঁদিকে সে গেল না। তাড়াতাড়ি উপরের দিকে উঠতে লাগল। বাঁশের আড়াল দিয়ে তার ঘাড় আর মাথা দেখতে পেয়ে আমার বন্দুক ঘুরিয়ে নেবার সামান্য শব্দ হবামাত্র সে আমার দিকে মুখ ফিরাল। গুলিটা ব্যাবীরের জ্ব-মধ্য বিন্দুতে লাগল, আর তার ইহ জীবনের হিসাব নিকাশ একেবারে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। আমার কপাল জোরে শিকারী জীবনে সাত বার ছাড়া আমাকে কখন বাঘে আক্রমণ করে নি। এর মধ্যে চার বার তারা নিজেরাই আমার গুলির আঘাতে এত বেশী কাতর হয়ে পড়েছিল যে তাদের আক্রমণে বিপদের কোন সম্ভাবনা ছিল না। আর একবার সােজা আমার ঘাড়ে এসে পড়তে পড়তে হঠাৎ কি মনে করে ভিন্ন পথে চলে গিয়েছিল। আর একটা আক্রমণে যখন বাথ নাচে হতে আমার দিকে আসবার চেষ্টায় ছিল তখন আমি নিজে হতেই গুলির জোরে সামলে নিয়েছিলাম। উপরে থাকার দুরূণ এ বিষয়ে আমার স্বাবধাও ছিল বেশী। সপ্তম আক্রমটি সব চেয়ে ভয়ানক। সে সম্বন্ধে দুচার কথা বলা আবশ্যক। ঘটনাটির বৃত্তান্ত হচ্ছে এই। জঙ্গলটা তেমন বড় ছিল না। অনেক খোঁজাখুজি খোঁচাখুচির পর প্রকাণ্ড এক শুয়াের হঠাৎ এক লম্ফে পলায়ন করলে। কাণ অনুসন্ধান করে জানা গেল বরাহ অবতার সারা রাত ধরে ক্ষেতের উপর তাণ্ডব অভিনয় করেছিল। ভােরের বেলা বিশ্রামের জন্যে আপন আশ্রয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, কিন্তু সেটি পরহস্তগত দেখেই স্বাধিকার সাব্যস্ত করবার চেষ্টা মাত্র না করে, আক্রমণ অপেক্ষা “Glorious retreat” সেখানে বুদ্ধির পরিচয় জ্ঞানে পলায়নতৎপর হয়েছিল। যে ব্যক্তির উপর শিকার সন্ধানের ভার ছিল তার বয়স অল্প। স্বভাবতই কল্পনা প্রবণ ও উৎসাহী। তার অনুরাধে আবিষ্কারের ফলাফল পরীক্ষা করে জানতে পারলাম বরাহবীরের পূর্বেই শালরাজ বনটি অধিকার করেছিল। শকর যখন এই সত্য