পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৫৩ শেষ হয়ে গেছে তখন আমার মনে হতে লাগল আমার শরীরটা যেন হিম হয়ে আছে। শিকারীদের মধ্যে একজন দেখালে বাঘের ক্ষত হতে কতকটা রক্ত আমার বাঁ পায়ের জুততার উপর পড়ে জমে গেছে। কতটুকুর জন্যে সে যাত্রা প্রাণ নিয়ে বাড়ী ফিরেছি তা আর বুঝতে বাকী রইল না। আমাকে অনেকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছেন শিকারে যাবার সময়, অসময়ে ব্যবহার করব বলে কোমরে আমি পিস্তল নিয়ে যাই কি না। বাছা কল্যাণ, এ কাজ আমি কখনই করি না। এ নিয়ে যাওয়াটা শুধু যে অনাবশ্যক তা নয়, বিশেষ বাধাস্বরূপ। সঙ্গে আমি একখানি ছােরা নিয়ে যাই সত্যি, কিন্তু মনে মনে সৰ্ব্বদাই ভরসা রাখি সেটা ব্যবহার করবার কারণ উপস্থিত হবে না। যে বিদ্যুৎগতিতে বাঘ কিম্বা চিত তােমার উপর এসে পড়ে তাতে ছােরা বার করবার অবসর বড় একটা পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় বারের গুলি যদি তােমায় রক্ষা না করলে তবে আর কিছুতেই রক্ষা করতে পারে না। প্রথমতঃ, তােমার সাহস, উপস্থিত বুদ্ধি, আর কাৰ্যকুশলত দ্বিতীয় তােমার ভাগ্য। এই দুই রক্ষাকবচ তােমার বিপদ বারণ কিম্বা তোমায় বিপন্মুক্ত করতে পারে। আবার অনেক সময় এ আক্রমণ যত গর্জে তত বর্ষে না। কিম্বা বাড়ম্বরে লঘুক্রিয়ার মত বিশেষ মারাত্মক কিছুই নয়। মানুষ প্রিয়-প্রসঙ্গে কথা কইতে বড় ভাল বাসে। এ স্থলে আমার প্রিয় ব্যাঘ্র সম্বন্ধে অনেক কথাই বলেছি। আশা করি তা পাঠকের শ্রান্তিওনক হবে না। কিঞ্চিৎ জ্ঞান লাভ হওয়াও সম্ভব। একবার একটা বাঘ না জেনে শুনে লাফিয়ে পড়ে শুয়াের ধরা একটা জালের মধ্যে কেমন করে আটকিয়ে পড়েছিল, সে ঘটনা এখানে বলা চলবে। তখন আমার তরুণ বয়স। মৃগয়া ব্যবসায়ে সবে ব্ৰতী হয়েছি। কি ভাবে শিকারী জন্তুর পদাঙ্কনুসরণ, অনুসন্ধান এবং তার বাসস্থান আবিষ্কার করতে হয় তারই শিক্ষানবিশী করছি। স্কুল কলেজে গ্রীষ্মের দীর্ঘ ছুটি হলেই জাল নিয়ে আমি শিকারীদের সঙ্গে বনে বনে বুনাে শুয়র ধরবার চেষ্টায় ফিরতাম। এ কাজে আমােদ ছিল; বিশেষতঃ বড় বড় শুয়রদের ফাদে ফেলবার চেষ্টার মধ্যে একটু বিপদের ঝাঁজ থাকবার দরুণ কাজটা আরও লােভনীয় আর রুচিকর বােধ হত। জালটা গুটিকত ছােট বাঁশে বেঁধে জড়িয়ে দিয়ে বন হতে বেরােবার পথে অন্য দুধার গাছের গুড়িতে বেঁধে দেওয়া যেত। তার পর শিকারীরা তাকে তাড়া দিয়ে সে দিকে নিয়ে আসত। তাড়া খেয়ে জাল ডিঙ্গিয়ে যাওয়া দুরে থাকুক তাড়াতাড়ি মাঝখানে লাফিয়ে পড়ে কিছুক্ষণের জন্য আটকা পড়ত। বর্ষা কাছেই থাকত, বন্দী না লাফাবার আগেই তার বিনাশ সাধনই হচ্ছে শিকারীর কাজ। এই জন্যই স্থিরলক্ষ্য, দৃঢ়তা আর সাহসের আবশ্যক হয়। দু-দুবার আমি দুঃখে পড়েছিলাম। একবার শূয়রের তাড়নায় ডিগবাজী খেয়ে নালায় গিয়ে পড়ি; আর একবার পড়ে যাবার পরে শিকারীরা এগিয়ে আসছে, শুয়াের ও তাড়া করবে মনে করেছে, এমন সময় সে নিজে অক্ষত শরীর ছিল বলেই কি অন্য কি কারণে বলতে পারিনে দে ভিন্ন পথে চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কিছু দূর পর্যন্ত জালটাকে টেনে নিয়ে গেল। কেমন করে দুই দিকের জাল খুলে এশ, সে সমস্যা পুরণ কঠিন নয়। বাঁধা আলগা ছিল। খুলতে দেরী লাগে নি। একদিন আমরা এক প্রকাণ্ড বাঘের পিছনে ফিরছিলাম। বন্দুকধারী মােটে দুজন; অথচ পলায়নের পথ বহু। তাই আমারই বুদ্ধিতে অন্ত অন্য পথে বাধা দেবার জন্য জাল বিছিয়ে দেওয়া হল। বাঘ আমায় দিকেই আসছিল; কিন্তু আমার নড়াচড়ার দরুণ অন্য দিকে ফিরে গেল, তবু তার পিছনের