পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৪ | ঝিলে জঙ্গলে শিকার পায়ে এক গুলি আমি লাগিয়ে ছিলাম। জাল যে দিকে বাঁধা ছিল একটু পরেই সেই দিক হতে বাঘের গর্জন শুনে আমরা তাড়াতাড়ি অথচ সাবধানে সেখানে গিয়ে দেখি কি, গুলদার কোটপয়া বাঘমশায় সেই জালে পড়ে, জালে ধরা মাছের মত লম্ফ-ঝম্প দিচ্ছেন। বেশী ক্ষণ অপেক্ষা করবার আর সময় ছিল না, কেন না বিপদ-জাল সে প্রায় কাটিয়ে উঠছিল, এমনি সময় পিছন হতে একটা গুলি তার কাধের উপর পড়ে লম্ফ-ঝম্প তর্জন গর্জন সব চিরদিনের জন্য নিঃশেষ করে দিলে। | ৫ই জানুয়ারী ১৯১৮। মেহের অলকা কল্যাণ, | খৃষ্টমাস, অর্থাৎ বড়দিন, বৎসরে শুধু একবার করেই এসে থাকে। ইংলণ্ড প্রবাসের কয় বৎসল্প ছাড়া এই ছুটীটা আমি আজ পর্যন্ত জঙ্গলে জঙ্গলে শিকারের পিছু পিছু ফিরেই কাটিয়েছি। নূতন ক্ষেত্র আর নব নব মৃগয়ার চেষ্টায় আমি গত বৎসরে এ সময়কার ছুটাটা মধ্যপ্রদেশে কাটিয়েছিলাম। ব্যাঘ্র সম্বন্ধে ভাগ্য এবার সুপ্রসন্ন হয় নি। এ বিষয়ে সব চেষ্টাই কোন না কোন ত্রুটীবশতঃ নিস্ফল হয়েছিল। প্রত্যেক মৃগয়া যাত্রাই শিকারীর ভাগ্যে সফলতার স্মৃতি বহন করে আনে তা নয়। এবার এক জোড়া সম্বর ( Samber) আর একটা দুটো ভালুকেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল। | প্রান্তরবাসী ঋক্ষ মহাশয় আমুদে হলেও মানুষকে বিপদে ফেলবার ওস্তাদ। তবে বিধিমতে এ মৃগয়ায় প্রবৃত্ত হলে আমেদও যথেষ্ট পাওয়া যায়। বাঘ ও চিতার মত এর দৃষ্টিশক্তি অত তীক্ষ্ণ না হলেও প্রাণশক্তি উভয়ের অপেক্ষা অধিক। গতিবিধি তেমন সুন্দর না হলেও লােকে তাকে যতটা গজেন্দ্রগমন মনে করে তা নয়। “পৰ্বতগৃহ ছড়ি বাহিরায় যবে, কার সাধ্য রােধে তার গতি ?” এ সময় তার সম্মুখে গিয়ে পড়া নিরাপদ নয়। সে বিশেষ বলী আর সহজে হার মানে না। আহত হয়েও সে যেমন দুর পথ অতিক্রম করে যেতে পারে বাঘের পক্ষে তা অসাধ্য। বাঘ যে আঘাতে মুহূর্তেই ঘুরে পড়ে যায় ভল্লুক সেখানে কিছু দুর পর্যন্ত না গিয়ে ভুমিশায়ী হয় না। আহত হলে কি পালাবার পথ না পেলে সে যে ভাবে সােরগােল শুরু করে সেটা আদপেই শ্রুতিসুখকর নয়। বীরের মত মরতে জানে শুধু বরাহ। গুলি লাগলে বাঘ আর্তনাদ করে, আহত হয়ে পালাতে না পারলেই গর্জন করে, কিন্তু ভালুক যে পরিমাণ হা হুতাশ আর মরা কান্না তােলে, তার মত জবরদস্ত জন্তুর পক্ষে সেটা একেবারেই লজ্জাজনক। । যদিও এদেশীয় ভল্লুক আলাস্কাবাসী ভ্রাতার মত বৃহদাকার হয় না তবুও এর দৈর্ঘ্য ও আয়তন কিছু মন্দ না। কখন কখন প্রায় সাত ফুট কি তার কাছাকাছি হতে দেখা যায়। ঘন কৃষ্ণ রােমের মধ্য হতে তার বহিরাগত উচ্চ দীর্ঘ রোমশূন্য নাসিকা দূরে হতেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মানুষের মত সমস্ত পায়ের পাতা দিয়ে সে হাঁটে। পথে যে পায়ের চিহ্ন রেখে যায় তাও মানুষের মত। ছাল ছাড়িয়ে নিলে তার লােেদর দেহ খানি রাজধানী কলিকাতার অবস্থাপন্ন স্কুলকায় বাড়ীওয়ালার মতই হাস্যকর দেখতে হয়। আর অনল শেষােক্তের মতই অপরিসীম ও ভয়ানক। স্বভাবটাও আকৃতির অনুরূপ। ঘাড়েতে পড়েন যার, বিপদ সঙ্গীন’,নখায়ুধ এই জীটীর