পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝিলে জঙ্গলে শিকার। ৫৭ করে আবিষ্কার করলাম সে একেবারে ভিন্ন পথের যাত্রী। কাছেই একটি নালাতে তার ভুক্কাবশেষ পড়েছিল। দেখে মনে হ’ল একবার নয় অনেকবার সে আহাৰ্য্য সংগ্রহ করে এনেছিল। বাঘের হাত হতে রক্ষা করে এনে সঞ্চিত খাদ্য নির্বিঘ্নে সম্ভোগ করবার অভিপ্রায়েই এ কাজ সে করেছিল মনে হ’ল। আমরা তখন অন্য ভল্লুকের রক্ত-চিহ্ন অনুসরণ করে চল্লাম। সে সমান ভাবে চলে গিয়েছে। মাঝে মাঝে নিশ্বাস নেবার জন্যে যেখানে যেখানে থেমেছে সেখানে অনেকখানি করে রক্তের দাগ। স্থানীয় শিকারী আর আমি দুজনেই একত্রে ধৈৰ্য্য সহকারে অনেক দূর পর্যন্ত তার সন্ধানে গিয়ে ছিলাম। পথ ক্রমে সঙ্কট, গুহাগরসঙ্কুল হয়ে উঠেছে দেখে তাকে তার ভাগ্যে যা আছে ভােগ করবার জন্যে ত্যাগ করে এলাম। প্রথম গুলিটা ঠিক বুকে না লেগে হয়ত কিছু উপরে লেগেছিল। একে অন্ধকার রাত তার উপরে তার চার ইঞ্চি পরিমাণ উচু কাল ঘন রোম বা ঘটিয়েছিল আর কি। গুলিটা ইঞ্চি দুইয়ের জন্যে নির্ঘাত হতে পারে নি। আমার বন্ধু বনবিভাগের কর্মচারী সারাটা জীবন বনেই বাস করেছেন। এর আগে ভালুকের এমন আমিষবৃত্তি আর কখনও দেখেন নি, বলেন। ভালুক তার ছানাদের প্রায় পিঠে করে বয়ে নিয়ে যায়। যদি একটিমাত্র ছানা হয় তাহলে সে পিঠের সঙ্গে এমন মিশে থাকে যে চোখেই পড়ে না। আমার একজন বন্ধু অল্পদিন হল মাচানের উপর থেকে একটি ভালুককে গুণি করেন। সেটা তখন দৌড়ে পালাচ্ছিল। যখন সে নালায় গড়িয়ে পড়ল তখন আবিষ্কার হল একটি নয় দুটি। এতে তিনি কতদুর বিস্মত হয়েছিলেন বলাই বাহুল্য। তাঁর Paradox বন্দুকের গুলি মাতাপুত্র দুজনেরই দেহ ভেদ করে প্রাণহরণ করেছিল। এ ক্ষেত্রে ইংরাজীতে যাকে বলে “Seeing double” সে ব্যাপার নিতান্তই মার্জনীয়। | এই একই অভিযানে একটা বড় হাস্যকর ঘটনা ঘটেছিল। তার পরিণাম সমূহ বিপজ্জনক হবার সম্ভাবনা থাকলেও কপালের জোরে সেটা আমরা এড়িয়েছিলাম। দুন্দুভি কিম্বা কুম্ভকর্ণ প্রমাণের একটা প্রকাণ্ড ভালুক বন পিটোবার সময় ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে এল। আমার গুলি তার কাঁধের পিছনে আড়াআড়ি গলা ফুড়ে গেল। বড় একটা পাথরের ঢিবির পিছনে সে পড়ে গেল। আমি মনে করলাম তার হিসাব নিকাশ হয়ে গেছে। এই সময় দ্বিতীয় আর একটা ভালুক আমার বাঁ দিকে দেখা দিল। খাটো পথ দিয়ে এগিয়ে যাবার সময় আমি চিৎ হয়ে পড়ে গেলাম। হাতে বন্দুক ছিল Holland and Holland। আশ্চর্যের বিষয় বন্দুকটা আওয়াজ হয়নি কিম্বা তার কোন রকম হানিও হয়নি। কিছুক্ষণের জন্যে অমিত চোখে সরষে ফুল দেখলাম। তার পর অনেক কষ্টে গুলি করবার জন্যে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে গেলাম। ভালুক তখন একটু বেশী দুরে গিয়ে পড়েছে। গুলি যে লাগবে এমন ভরা আমার ছিল না। তবে দৈবাৎ অনেক রকম হয়। ভালুকটাকে ধরাশায়ী হতে দেখেই আমার পতন এবং আঘাতের সব বেদনা দূর হয়ে গেল। এমন সময় শুনতে পেলাম আমার বন্ধু দুটি চিৎকার করলেন। ফিরে দেখলাম যে সব লােকেরা আমার বর্ষাতি প্রভৃতি নিয়ে প্রতীক্ষা করছিল, “ভালু” তাদের আক্রমণ করতে আছে বলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রাণভয়ে প্রাণপণে দৌড়চ্ছে। আমি যথাসাধ্য সেদিকে দৌড়ে গেলাম। ইচ্ছামত দ্রুত যেতে পালাম না। আমার পিঠের ব্যথা তখন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। যাই হক অক্ষিণের মধ্যেই ভালুকের কাছে গিয়ে পৌছিলাম। তার অবস্থা তখন আমার চেয়েও শােচনীয়। আমি গুলি করতে যাব এমন সময় সে মুখ।