পাতা:ঝিলে জঙ্গলে শিকার - কুমুদনাথ চৌধুরী - প্রিয়ম্বদা দেবী.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬০ ৬ • ঝিলে জঙ্গলে শিকার আবশ্যক ( নিটোল ৪৮ গ্রেণ ওজনের গুলি ছাড়া বড় একটা কাজ হয় না। তার নখর এবং দন্ত দুই বড় ভয়ানক। আর অতি সামান্য কারণে কিম্বা অকরেণে শারীরিক সমস্ত শক্তি প্রয়ােগ করে সর্বদাই সে এই অস্ত্র মুগল ব্যবহার করবার জন্যে সততঃ ও সত্বর উদ্যত হয়। ১০ই জানুয়ারি, ১৯১৮ খৃঃ। স্নেহের অলকা কল্যাণ, | গৌর বা ভারতীয় বাইসন (যদিও এখানে তাকে অভিহিত করা সমীচীন কিনা বলতে পারি না) রাজোচিত গৌরব ও পদবীর ষােগ্য। ও ঋষভ জাতীয় এই জীবের বিপুল বপু রাজঘােগ্য। ইহারা মান্যপদ এবং বহু কৃচ্ছসাধনেও দুর্লভ। আরণ্য বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শিতার ফলে তবে তার আবিষ্কার এবং সর্শন লাভ হয়। এই সব কারণে তাকে লাভ করা মৃগায়ানুরক্ত ব্যক্তির জীবনে যুগপৎ স্বপ্ন এবং দুরাশা। কোন কোন প্রদেশে হয় তাদের সমূলে নির্বংশ নয় গভীরতম অরণ্যে নির্বাসিত করা হয়েছে। আজকাল বড় আকাঙ্ক্ষার গৌরশৃঙ্গমুগল লাভ করতে হলে শিকারীর অসীম ধৈৰ্য্যগুণ আর অপরিসীম কাৰ্য্যতৎপরতা আবশ্যক। তাকে পেতে হলে তার অভিমত স্থানে অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হতে হয়। দিনের পর দিন লুকোচুরি খেলাতেই কেটে যায়। আর বৎসরে যে ঋতুতে এ খেলা খেলতে হয় তার ফলে ম্যালেরিয়: না হয়ে যায় না। পরিণত বয়স্ক এই বৃষপুঙ্গব যখন গম্ভীর পদক্ষেপে অগ্রসর হয় কিম্বা আন্দোলিত গতিতে দৌড়ে চলে সে সুন্দর দৃশ্য একবার দেখলে ভুলবার নয়। তার গুরু দেহ হাঁটুর নীচে হতে খুর পর্যন্ত দুধের মত সাদা। হ্রস্ত পদচতুষ্টয়, বড় বড় সুনীল দুটী চোখ, উন্নত শরীর, প্রকাণ্ড মস্তক নির্জন গভীর অরণ্য সৌন্দর্যের সঙ্গে সাম্য রক্ষা করে। গবাদি জাতীয় অন্য জীবের মত তার গল কম্বল নেই। ললাট ভাগ গাঢ় কপিশ বর্ণের রােমে আবৃত। এই ললাট ভাগ অর্ধচন্দ্রাকৃতি, দীর্ঘ সুগঠিত, শৃঙ্গমুগল সমাবেশে দ্বিগুণ মহিমান্বিত। উন্নত শৈলে, গভীর উপত্যকায় কতবার শ্রান্তপদে এই সতর্ক সাবধান জীবটার অনুসরণ করেছি। এমন সব স্থানে বাতাসের গতি সর্বদা তোমার অনুকূল হওয়া অসম্ভব। কাজেই সমস্ত দলটীর যখন পদশব্দের আভাস পাওয়া মাত্র ত্বরিতগতিতে উপত্যক। প্রদেশের গভীর বনের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় তখন সমস্ত মন হতাশার আক্ষেপে মগ্ন না হয়ে পারে না। দিনের পর দিন ধৈৰ্য্য ধরে অধ্যবসায়ের সঙ্গে অন্বেষণের পর হঠাৎ যখন দেখা যায় এই কৃষ্ণ গোর পায়ে সাদা মােজা পরে দ্রুতগতিতে বনের মধ্যে দূর হতে দূরে প্রয়াণ করলে, একটা গুলি দিয়ে সম্ভাষণ করবারও সুযােগ হল না, তখন মন বড় দমে যায়। আবার হয়ত ক'দিন ধরে সব বেশ চলেছে, কেবল আকাশে রে'দ্রের প্রকোপ অত্যন্ত অধিক, বাতাস চলতে একেবারে নারাজ, চারি দিকে গুমই করে আছে, এমন সময় মহা সমারােহে যোদ্ধ বেশে বা এন দেখা দিল। আকাশে ঘন কাল মেধ ব্যহ জমা হয়ে সমস্ত আলোককে নির্বাসিত করলে, উৎক্ষিপ্ত কুয়াশার অত্যাচারে শৈল মালা অদৃশ্য হয়ে গেল, অশান তৰ্জনে চারি দিক কম্পিত দিত, প্রতিধ্বনিতে শঙ্কিত হয়ে উঠল। প্লাবন ধারায় বৃষ্টি নেমে এসে পথ ঘাট, সঙ্গে সঙ্গে তােমাকেও, ভাসিয়ে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে লাগল। শিকারের আশা ভরসা সব ইতিপূর্বেই ধুয়ে মুছে গিয়েছিল ; তখন বাকি ছিল শুধু তাঁবুতে ফিরে যাওয়া। আকাশের দুর্ব্যবহারে পৃথর দূরবস্থায় ক্রমে তাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল। এই সব অসুবিধার মধ্যে কিছুকাল ধরে একটানা অত্যধিক পরিশ্রমের পর বহু নিরাশার ভিড় ঠেলে যখন অভীষ্ট