পাতা:টুনটুনির বই.djvu/১২১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 মজন্তালী গাছের আগা থেকে বললে, ‘কি রে বাঘ, খাজনা দিবি না? আয়, আয়?’

 শুনেই তো বাঘ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে, ‘হাল্লুম!’ বলে দুই লাফে সেই গাছে গিয়ে উঠেছে। কিন্তু খালি উঠলে কি হয়? মজন্তালীকে ধরতে পারলে তো! সে একটুখানি হালকা জন্তু, সেই কোন সরু ডালে উঠে বসেছে, অত বড় ভারী বাঘ সেখানে যেতেই পারছে না। না পেরে রেগে-মেগে বেটা দিয়েছে এক লাফ, অমনি পা হড়কে গিয়েছে পড়ে! পড়তে গিযে, দুই ডালের মাঝখানে মাথা আটকে, তার ঘাড় ভেঙে প্রাণ বেরিয়ে গিয়েছে।

 তা দেখে মজন্তালী ছুটে এসে তার নাকে তিন চারটে আঁচড় দিয়ে, বাঘিনীকে ডেকে বললে, ‘এই দেখ, কি করেছি! আমার সামনে বেয়াদবি!’

 এ সব দেখে শুনে তো ভয়ে বাঘিনী বেচারীর প্রাণ উড়ে গেল! সে হাত জোড় করে বললে, ‘দোহাই মজন্তালী মশাই, আমাদের প্রাণে মারবেন না! আমরা আপনার চাকর হয়ে থাকব।’

 তাতে মজন্তালী বললে, ‘আচ্ছা তবে থাক, ভালো করে কাজকর্ম করিস, আর আমাকে খুব ভালো খেতে দিস।’

 সেই থেকে মজন্তালী বাঘিনীদের বাড়িতেই থাকে। খুব করে খায় আর বাঘিনীর ছানাগুলির ঘাড়ে চড়ে বেড়ায়। সে বেচারারা তার ভয়ে একেবারে জড়-সড় হযে থাকে, আর তাকে মনে করে, না জানি কত বড় লোক!

 একদিন বাঘিনী তাকে হাত জোড় করে বললে, ‘মজন্তালী মশাই, এ বনে খালি ছোট ছোট জানোয়ার, এতে কিছু আপনার পেট ভরে না। নদীর ওপারে খুব ভারী বন আছে, তাতে খুব বড়-বড় জানোয়ারও থাকে। চলুন সেইখানেই।’

 শুনে মজন্তালী বললে, ‘ঠিক কথা; চল ওপারে যাই।’ তখন বাঘিনী তার ছানাদের নিয়ে, দেখতে-দেখতে নদীর ওপারে চলে গেল। কিন্তু মজন্তালী কই? বাঘিনী আর তার ছানারা অনেক খুঁজে দেখলে—ঐ মজন্তালী সরকার নদীর মাঝখানে পড়ে হাবু-ডুবু খাচ্ছে! স্রোতে তাকে ভাসিয়ে সেই কোথায় নিয়ে গিয়েছে, স্মার ঢেউয়ের তাড়ায় তার প্রাণ যায়-যায় হয়েছে!

 মজন্তলী তো ঠিক বুঝতে পেরেছে যে, আর দুটো ঢেউ এলেই সে মারা যাবে। এমন সময় ভাগ্যিস বাঘিনীর একটা ছানা তাকে তাড়াতাড়ি ডাংগায় তুলে এনে বাঁচাল, নইলে সে মরেই যেত, তাতে আর ভুল কি?

 কিন্তু মজন্তালী সরকার তাদের সে কথা জানতেই দিল না। সে ডাংগায় উঠে ভয়ানক চোখ রাঙিয়ে বাঘের ছানাকে চড় মারতে গেল, আর গাল যে কত দিল তার তো লেখা-জোখাই নেই। শেষে বললে, ‘হতভাগা মূর্খ, দেখ দেখি কি

১১৭