পাতা:টুনটুনির বই.djvu/১২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

করলি! আমি অমন চমৎকার হিসাবটা করছিলুম, সেটা শেষ না হতেই তুই আমাকে টেনে তুলে আনলি—আর আমার সব হিসাব এলিয়ে গেল! আমি সবে গুনছিলুম, নদীতে কটা ঢেউ, কতগুলো মাছ আর কতখানি জল আছে। মুর্খ বেটা, তুই এর মধ্যে গিয়ে সব গোলমাল করে দিলি! এখন যদি আমি রাজামশাইয়ের কাছে গিয়ে এর হিসাব দিতে না পারি, তবে মজাটা টের পাবি!’

 এসব কথা শুনে বাঘিনী তাড়াতাড়ি এসে হাত জোড় করে বললে, ‘মজন্তালী মশাই, ঘাট হয়েছে, এবারে মাপ করুন। ওটা মূর্খ, লেখাপড়া জানে না তাই কি করতে কি করে ফেলেছে!’

 মজন্তালী বললে, ‘আচ্ছা, এবারে মাপ করলুম! খবরদার! আর যেন কখনো এমন হয় না!’ এই বলে মজন্তালী তার ভিজে গা শুকাবার জন্যে রোদ খুঁজতে লাগল।

 ভারী বনের ভিতরে সহজে রোদ ঢুকতে পায় না। সেখানে রোদ খুঁজতে গেলে উঁচু গাছের আগায় গিয়ে উঠতে হয়। মজন্তালী একটা গাছের আগায় উঠে দেখলে যে, এই বড় এক মরা মহিষ মাঠের মাঝখানে পড়ে আছে। তখন সে তাড়াতাড়ি গিয়ে সেই মহিষটার গায়ে কয়েকটা আঁচড় কামড় দিয়ে এসে বাঘিনীকে বললে, ‘শীগগির যা, আমি একটা মোষ মেরে রেখে এসেছি।’

 বাঘিনী আর তার ছানাগুলো ছুটে গিয়ে দেখলে, সত্যি মস্ত এক মোষ পড়ে আছে। তারা চারজনে মিলে অনেক কষ্টে সেটাকে টেনে আনলে, আর ভাবলে, ‘ঈস! মজন্তালী মশাইয়ের গায়ে কি ভয়ানক জোর!’

 আর একদিন তারা মজন্তালীকে বললে, ‘মজন্তালী মশাই, এ বনে বড়-বড় হাতি আর গণ্ডার আছে। চলুন একদিন সেইগুলো মারতে যাই।’

 একথা শুনে মজন্তালী বললে, ‘তাই তো, হাতি গণ্ডার মারব না তো মারব কি? চল আজই যাই।’

 বলে সে তখুনি সকলকে নিয়ে হাতি আর গণ্ডার মারতে চলল। যেতে যেতে বাঘিনী তাকে জিগগেস করলে, ‘মজন্তালী মশাই, আপনি খাপে থাকবেন না, ঝাঁপে থাকবেন?’ খাপে থাকবার মানে কি? না—জন্তু এলে তাকে ধরে মারবার জন্যে চুপ করে গুঁড়ি মেরে বসে থাকা। আর ঝাঁপে থাকার মানে হচ্ছে, বনের ভিতরে গিয়ে ঝাঁপাঝাঁপি করে জন্তু তাড়িয়ে আনা।

 মজন্তালী ভাবলে, ‘আমার তাড়ায় আর কোন জন্তু ভয় পাবে?’ তাই সে বললে, ‘আমি ঝাপিয়ে যে সব জস্তু পাঠাব, তা কি তোরা মারতে পারিস? তোরা ঝাঁপে যা, আমি খাপে থাকি।’

 বাঘিনী বললে, ‘তাই তো, সে সব ভয়ানক জন্তু কি আমরা মারতে পারব। চল বাছারা, আমরা ঝাঁপে যাই।’

১১৮