তাতে সে চাকর হেসে বললে, ‘মহারাজ, এক সের চাল তো ঝাড়ুওয়ালারা খায়—তাতে কি হাতি টানা চলে?’
রাজা বললেন, ‘তবে তুই কি চাস?’
চাকর বললে, ‘মহারাজ, বেশী আর কি চাইব?—এই মণ দুই চাল, দুটো খাসী তার এক মণ দই হলেই চললে।’
রাজা বললেন, ‘আচ্ছা তাই পাবি, কিন্তু খেতে হবে সব।’
চাকর বললে, ‘যে আজ্ঞে, মহারাজ!’
বামুনের চাকর সেই দু মণ চালের ভাত আর দুটো খাসী, আর এক মণ দই দিয়ে পেট ভরে খেয়ে তো আগে খুব এক চোট ঘুমিয়ে নিল। তারপর নিজের গামছাখানি দিয়ে সেই হাতিটাকে জড়িয়ে, বেশ করে একটি পুঁটুলি বাঁধল। তারপর পুঁটুলিটিকে লাঠির আগায় ঝুলিয়ে, সে লাঠিসুদ্ধ সেই পুঁটুলি কাঁধে ফেলল। তারপর গণ্ডা দশেক পান মুখে গুঁজে গান গাইতে গাইতে গঙ্গায় চলল। তা দেখে রাজামশাই হাঁ করে রইলেন, তার তিনশো লোক হাঁ করে রইল, আর সকলে ছুটে বাড়িতে খবর দিতে গেল।
ততক্ষণে সে চাকর অনেক দূরে চলে গিয়েছে, আর খুব চনচনে রোদ উঠেছে। আরো অনেক দূর গিয়ে চাকর বললে, ‘উঃ! কি ভয়ানক রোদ! আমার গলাটা বড্ড শুকিয়ে গেছে, একটু জল খেতে পেলে হত!’
বলতে-বলতেই সে দেখল যে খানিক দূরে একটি পুকুর রয়েছে, সেই পুকুরের ধারে গাছপালার আড়ালে একটি কুঁড়ে ঘর। চাকরটি পুকুরের ধারে তার পুঁটলিটি রেখে, সেই ঘরের কাছে গিয়ে দেখলে সেখানে একটি ছোট মেয়ে বসে আছে।
সে সেই মেয়েটিকে বললে, ‘বাছা, আমার বড্ড তেষ্টা পেয়েছে, একটু জল খেতে দেবে?’
মেয়েটি বললে, ‘মোটে এক জালা জল আছে। তোমাকে যদি দিই, তবে বাবা মাঠ থেকে এসে কি খাবেন?’
একথা শুনে চাকর রেগে বললে, ‘বটে! তুই একটু জল খেতে দিবিনে? আচ্ছা, দেখি এরপর তোরা কোত্থেকে জল খাস।’
এই বলে সে সেই পুকুরে নেমে, চোঁ-চোঁ করে তার জল খেতে লাগল। যতক্ষণ সেই পুকুরে জল ছিল, ততক্ষণ খালি চোঁ-চোঁ শব্দ শোনা গিয়েছিল। দেখতে দেখতে সে সেই এক পুকুর জল খেয়ে শেষ করল! জল খেতে-খেতে তার পেটটা ফুলে আগে ঢাকের মতো হল, তারপর হাতির মতো হল, শেষে একেবারে পাহাড়ের মতো হয়ে গেল। এমনি করে পুকুরের সব জল খেয়ে বামুনের চাকর দেখল যে, সে জল আর কিছুতেই তার পেটে থাকতে চাচ্ছে