পাতা:টুনটুনির বই.djvu/১৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সঙ্গে তাদের দেখা হল। মেছুনী ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে বাজারে বেচতে যাচ্ছিল। তাদের দুজনকে দেখে জিজ্ঞেস করলে, ‘হ্যাঁ, গা, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?’

 তারা বললে, ‘বাজারে যাচ্ছি, কুস্তি লড়তে।’

 তা শুনে মেছুনী বললে, ‘বাজার তো ঢের দূর বাছা, এত কষ্ট করে তোরা সেখানে যাবি কি করতে? তার চেয়ে আমার ঝুড়ির ভিতর এসে কুস্তি কর। কুস্তি করতে-করতে যার দিকে ঝুড়ি ঝুঁকে পড়বে, আমি জানব তারই হার হয়েছে।’

 শুনে তারা দুজনে বললে, ‘বাঃ, বেশ কথা! কুস্তিও করতে পাব, হাঁটতেও হবে না।’

 এই বলে তারা মেছুনীর ঝুড়িতে ঢুকে কুস্তি আরম্ভ করল, আর মেছুনী সেই ঝুড়ি মাথায় করে বাজারে চলল।

 এমন সময়ে এক কাণ্ড হয়েছে। সেই দেশে এক সর্বনেশে চিল থাকত। সে গরু, মহিষ, হাতি, ঘোড়া, যা পেত তাই ধরে গিলত। খালি সেই মেছুনীর কাছে সে জব্দ ছিল। মেছুনীর ঝুড়ি ধরতে এলেই, মেছুনী তাকে এমনি বকুনি দিত যে, সে পালাবার পথ পেত না। কিন্তু তাতে তার রাগ আরও বেড়ে যেত আর সে ভাবত যে, যেমন করেই হোক একদিন ঐ ঝুড়িটা কেড়ে নিতে হবে।

 সেদিনও সেই চিল খাবার খুঁজতে বেরিয়েছে, দূর থেকে তার পাখার শোঁ-শোঁ শব্দ শোনা যাচ্ছে।

 এক গোয়ালা সাতশো মোষ মাঠে চরাতে এনেছিল। সে সেই শব্দ শুনে ভাবলে, ‘সর্বনাশ। ঐ সেই চিল আসছে, আমার মোষ খেয়ে ফেলবে। এখন কি করি?’

 এই ভেবে গোয়ালা সেই সাতশো মোষ ট্যাঁকে গুঁজে নিয়ে, ভোঁ-ভোঁ করে বাড়ির পানে ছুটল।

 বাড়ির লোকে জিগগেস করল, ‘কি হয়েছে? অত যে ছুটে এলে?’

 সে বললে, ‘ছুটব না। চিল আসছে যে, আমার মোষ খেয়ে ফেলবে।’

 তারা বললে, ‘তবে মোষ কোথায় রেখে এলে?’

 সে বললে, ‘রেখে আসব কেন? সঙ্গে এনেছি।’

 তারা বললে, ‘তবে কই মোষ?’

 সে বললে, ‘এই দেখ না।’

 বলে সে ট্যাঁক খুলে দিল, আর সাতশো মোষ তার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল।

 তা দেখে তারা খুব খুশী হয়ে বললে, ‘ভাগ্যিস তুমি ট্যাঁকে করে নিয়ে এসেছিলে, নইলে আজ সব মোষ খেয়ে ফেলত।’

}

১২৬