যাহারা আমার মত অবস্থায় অন্ততঃ দুইদিনও কাটাইয়াছে, তাহারাই আমার দুঃখ কতক বুঝিবে; ভদ্রলোক আমার দুঃখ বুঝিতে কখনই সমর্থ হইবেন না, কল্পনা করিয়াও আমার অবস্থা বুঝিতে পারিবেন না।
আমার মনের ভিতর যে দুঃখ-রাশি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে, তাহা যদি দেখাইবার হইত, তবে দেখাইতাম; বলিয়া কি করিব? যে দুঃখের আদি নাই, মধ্য নাই, অন্ত নাই—যাহা আজীবন বলিয়াও শেষ করিতে পারিব না; সেই অসীম অনন্ত দুঃখের কাহিনী বলিয়া লাভ কি?
আপনারা কি আমার দুঃখ বুঝিবেন? আমার জীবনকাহিনী কি একবার পড়িবেন? ইহাতে আপনাদিগের মনে অনন্দ হইবে না, ইহা ভাল লাগিবে না। ইহা গল্প নহে, উপন্যাস নহে—ইহাতে রাজা বা রাজপুত্র নাই, সেনাপতি নাই, যুদ্ধ বিগ্রহ নাই, ঝড় বৃষ্টি—মেঘ গর্জ্জন নাই, বজ্রপাত নাই, সুন্দর বন বা উপবন নাই, দেবমন্দির নাই, যোগী ঋষি নাই, সরোবর নাই, পদ্ম নাই, সুন্দরী রমণী নাই, রূপবর্ণন নাই, নব-দম্পতির নব-প্রণয়-সম্ভাষণ প্রভৃতি কিছুই নাই। ইহাতে কেবলমাত্র এই হতভাগার জীবনের স্থূল স্থূল কয়েকটী প্রকৃত কথা আছে। কিরূপে আমার মন কলুষিত হইয়া ক্রমে ক্রমে দুষ্কর্ম্মের সোপানশ্রেণী উল্লঙ্ঘন করিয়াছে এবং পরিশেষে কিরূপেই বা আমার এরূপ দুর্গতি হইয়াছে, সেই সকল দুঃখের কাহিনী যতদুর বলিতে সমর্থ হইয়াছি, বলিতে চেষ্টা করিয়াছি; সমস্ত বলিবার ক্ষমতা নাই, মনেও নাই। যে দুঃখরাশি আমার অদৃষ্টে ঘটিয়াছে,