পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সহায়তা, সহানুভূতি ও কর্মকুশলতার অভাব, সেখানে কোনো কাজে সাফল্য লাভ করা যায় না। যেখানে সুখে-দুঃখের ভাগাভাগি আছে, হাসিকান্নার অংশ হিসাব আছে, সেখানে সাহচর্য অযাচিত ভাবে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে সকল কর্ম সফলতায় গৌরবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। যে কাজে সাধারণের হৃদয় বিনিয়োগ হয়, তা অসাধ্য হলেও সমবেত ইচ্ছাশন্তি ও প্রেরণার বলে সহজসাধ্য হয়ে পড়ে। আন্তরিকতাবিহীন অনষ্ঠান বিধাতার অভিশাপে দৃষ্ট— কাজেই আত্মনাম-ঘোষণার চেষ্টার মধ্যে কর্মজীবনের শ্রেষ্ঠত্ব নাই, বাগাড়ম্বরপূর্ণ কাজের মধ্যে সার্থকতা নাই। তাই বলি, আমাদের হৃদয় দিয়ে কাজ করতে হবে, ‘ছুৎমার্গ’ পরিহার করে অস্পৃশ্যতা-ভূতকে ঝেড়ে ফেলে সবাইকে আপনার বলে আলিঙ্গন করতে হবে। মনকে ফাঁকি দিলে চলবে না, বিবেকের গলা টিপে ধরলে কুকর্ম আরো জোর গলায় প্রচারিত হবে।

 অন্তর থেকে যে কর্ম-শক্তি আমাদের উদ্বুধ করবে, যে নৈতিক বল আমাদের সত্য ও ন্যায়ের পথে চালিত করবে। সেই শক্তি, সেই বলকে আহুতির অগ্নির মতো চিরন্তনের জন্য উদ্দীপ্ত রাখতে হবে।—আশা চাই, উৎসাহ চাই, সহানুভূতি চাই, প্রেম চাই, অনুকম্পা চাই— সবার উপরে মানুষ হওয়া চাই। মানুষের মধ্যে দেবতার প্রতিষ্ঠাই আমাদের সাধনা— জীবনব্যাপী এই সাধনার মধ্যে আমাদের মুক্তি নান্য পন্থা।

 মিলনের এই পূণ্য দিনে, এই কল্যাণকর্মের অনুষ্ঠানকল্পে, প্রারম্ভেই আমি আপনাদের আহ্বান করছি। এ আহ্বান তাঁর, যিনি আমাদের শতাব্দীর পর শতাব্দী, বর্ষের পর বর্ষ, দিনের পর দিন, আহ্বান করেছেন— ভোগ থেকে বিরত হয়ে ত্যাগ করবার জন্য, অবসাদ থেকে জেগে উঠে কর্ম করবার জন্য, বিস্মৃতিকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের জাতির ইতিহাস-লব্ধ আত্মাকে অনুভব করবার জন্য। নরনারায়ণের এই আহ্বান উপেক্ষা করবার নয়। রোগে যারা অবসন্ন, দারিদ্র্যে নির্যাতনে যারা কাতর, তাদের মধ্যে আমি সে আহ্বান, সে আদেশ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি— সে আদেশ আজ দেশের কানে পৌঁচেছে, তাই আজ আমাদের নিদ্রিত নারায়ণ জেগে উঠেছেন— ভোগবিলাস ও আরামের মাঝখানে নয়— যেখানে দারিদ্র্য, যেখানে দুভির্ক্ষ, যেখানে নির্যাতন, যেখানে অপমান— সেখানে গিয়ে আজ তাঁকে পূজা করতে হবে। পুরাতন পুঁথি পড়া মন্ত্র আওড়ালে চলবে না, আশার গান গেয়ে তাকে শুনাতে হবে— যে আশার গানে রোগী বিছানা থেকে বল পেয়ে উঠে দাঁড়াবে, ঋণ-ভার-জর্জরিত