পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভ্রান্ত পথের প্রভাব হইতে আত্মরক্ষা করো। নিজে আত্মস্থ হইয়া জীবনের প্রকৃত আদর্শ চিনিয়া লও।

 ১৫ বৎসর পূর্বে যে আদর্শ বাংলার ছাত্রসমাজকে অনুপ্রাণিত করিত তাহা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ। সে আদর্শের প্রভাবে তরুণ বাঙালী ষড়রিপু জয় করিয়া স্বার্থপরতা ও সকল প্রকার মলিনতা হইতে মুক্ত হইয়া আধ্যাত্মিক শক্তির বলে শুধু বুদ্ধ-জীবন লাভর জন্য বদ্ধপরিকর হইতে। সমাজ ও জাতি গঠনের মূল— ব্যক্তিত্ব বিকাশ। তাই স্বামী বিবেকানন্দ সর্বদা বলিতেন “man making is my mission”—খাঁটি মানুষ তৈয়ারি করাই আমার জীবনের উদ্দেশ্য।

 কিন্তু ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে এত জোর দিলেও স্বামী বিবেকানন্দ জাতির কথা একেবারে ভুলিয়া যান নাই। কর্মবিহীন সন্ন্যাসে অথবা পরুষকারহীন অদৃষ্টবাদে তিনি বিশ্বাস করিতেন না। রামকৃষ্ণ পরমহংস নিজের জীবনের সাধনার ভিতর দিয়া সর্বধর্মের যে সমন্বয় করিতে পারিয়াছিলেন তাহাই স্বামীজির জীবনের মূলমন্ত্র ছিল এবং তাহাই ভবিষ্যৎ ভারতের জাতীয়তার মূলভিত্তি। এই সর্বধর্ম—সমন্বয় ও সকল-মত-সহিষ্ণুতার প্রতিষ্ঠা না হইলে আমাদের এই বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে জাতীয়তার সৌধ নির্মিত হইতে পারিত না।

রাজা রামমোহনের যুগ

বিবেকানন্দ-যুগের পূর্বে যখন আমাদের দেশে নবযুগ প্রথম আরম্ভ হয় তখন আমাদের পথপ্রদর্শক ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। ধর্মের নামে যে-সব অধর্ম চলিতেছিল, যে-সব আবর্জনা ও কুসংস্কার ধর্মের নামে সমাজ-দেহকে আচ্ছাদন করিয়াছিল এবং হিন্দু সমাজকে শতধা বিভক্ত করিয়াছিল, তাহা ধ্বংস করিবার জন্য রাজা রামমোহন কৃতসংকল্প হইয়াছিলেন। বেদান্তের সত্য প্রচারিত হইলে হিন্দু সমাজ ধর্মের বহিরাববণ বর্জন করিয়া সত্য ধর্ম আশ্রয় করিতে পারিবে এবং ভেদজ্ঞান ভুলিয়া আবার একতা সূত্রে আবদ্ধ হইতে পারিবে এ বিশ্বাস তাঁহার ছিল। এবং ধর্মজগতে বিপ্লব আনিতে হইলে, আগে চিন্তাজগতে আলোড়ন সূচনা করা দরকার—তাই ভারতের চিন্তাশক্তিকে জাগাইবার জন্য তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিয়াছিলেন।

১০০