পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীণ মুক্তিলাভ

যাহারা মনে করে রাষ্ট্রীয় বন্ধন হইতে তাহারা দেশকে মুক্ত করিবে কিন্তু সমাজের পূর্বাবস্থা বজায় রাখিবে—অথবা যাহারা মনে করে যে সামাজিক বন্ধন সব চূর্ণ করিবে কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কোনো বিপ্লব আনিবে না—তাহারা সকলেই ভ্রান্ত। বস্তুত শরীরে স্বাস্থ্য ফিরিয়া আসিলে প্রত্যেক অঙ্গে যেরূপ পূর্বশ্রী ফিরিয়া আসে—মুক্তির আকাঙ্ক্ষা যখন জাতির অন্তরে জাগিয়া উঠে তখন তাহা সব দিক দিয়া ফুটিয়া বাহির হয়। জাতি যখন সমস্ত বন্ধন হইতে মুক্ত হইতে চায় তখন কেহ বলিতে পারে না— thus far and no further.

 আমাদের এই শতছিদ্রযুক্ত, পূতিগন্ধময় সমাজের দ্বারা পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ কোনোদিন হইবে না। পূর্ণ স্বাধীনতা (complete independence) লাভ করিতে হইলে সমস্ত জাতিকে মুক্তিলাভের জন্য ক্ষিপ্তপ্রায় হইতে হইবে। কিন্তু যে ব্যক্তি সামাজিক অত্যাচারে নিষ্পিষ্ট অথবা অর্থনৈতিক বৈষম্যে ভারাক্রান্ত, সে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার জন্য পাগল হইবে কেন? যার কাছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অত্যাচারই সবচেয়ে বড়ো সত্য— সে ব্যক্তি এই সব অত্যাচার হইতে মুক্ত হইতে না পারিলে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা লাভের জন্য উদগ্রীব হইবে কেন?

 আজ এই কথাটি আমি খুব বড়ো করিয়া এখানকার ছাত্রসমাজের মধ্যে বলিতে আসিয়াছি—যে যুগে আপনারা জন্মিয়াছেন সে যুগের ধর্ম—পরিপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীণ মুক্তি লাভ। স্বাধীন দেশে স্বাধীন আবহাওয়ার মধ্যে আমাদের জাতি জন্মিতে চায়—বর্ধিত হইতে চায় এবং মরিতে চায়। ‘পুরুষ অবরুদ্ধ আপন দেশে, নারী অবরুদ্ধ নিজ নিবাসে’—এ অবস্থা আর কতদিন চলিবে। আমাদের নারীসমাজের বর্ণনা করিবার সময়ে আমরা আর কতদিন বলিব—

‘অচল হয়েও সচল সে যে
বস্তার চেয়েও ভারী।
মানুষ হয়েও সঙের পতুল
বঙ্গদেশের নারী।’

 স্বাধীনতার নামে অনেকের আতঙ্ক উপস্থিত হয়। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার কথা ভাবিলে অনেকে স্বপ্ন দেখেন রক্ত-গঙ্গার এবং ফাঁসিকাষ্ঠের। সামাজিক

১০৪