পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৃষক সাহস করে কাঁধে লাঙ্গল তুলবে, অশীতিপর বৃদ্ধ বহুবর্ষ সঞ্চিত দুঃখের গুরুভার লাঘব হয়েছে বলে মনে করবে।

 আজ পৃথিবীর সমস্ত আলো, সমস্ত বাতাস থেকে আমাদের প্রাণে সেই অফুরন্ত সংগীতের আনন্দধ্বনি আসছে, আমাদের বুকের মধ্যে আবেগের উল্লাস নিত্য আজি সেই সুরের সঙ্গে পা ফেলে চলেছে। এ কী উৎসাহ। এ কী আনন্দ। আমার মনে হয় এই আনন্দই আমার জাতির আনন্দ, আমার নারায়ণের আনন্দ। তিনি কোন্ ওপার থেকে আনন্দে এক সোনার সুতায় কাটনা কেটে আসছেন— যা আজ রবির কিরণ হয়ে গাছের শ্যামলতায় চিকমিকিয়ে উঠছে— ভরা নদীর উচ্ছ্বসিত জলে শতধা বিভক্ত হয়ে আনন্দস্রোতে ভেসে চলেছে, আবার সেই সোনার সুতাই যেন আজ আমাদের হাতের রাঙা রাখী হয়ে, আমাদের সকলকে সকলের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছে ভোগীর সঙ্গে ত্যাগীকে, বার্ধক্যের সঙ্গে যৌবনকে, কর্মীর সঙ্গে ভাবুককে। এই সুরের জাল যখন সমগ্র দেশকে বেড়ে ফেলবে, তখন আজকার এই পূণ্য দিনের ভরসার কিরণ-সম্পাত আসন্ন ভবিষ্যতের সার্থকতায় সমুজ্জ্বল হয়ে উঠবে।— আর তখন, যিনি ও পারে দ্যুলোকে আকাশের চরকায় আলোকবৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করছেন— এবং ভূলোকে কালের চরকায় কত বিভিন্ন জাতির বিচিত্র ইতিহাসের সুবর্ণসূত্রের সষ্টি করছেন—তাঁকে আমরা পরম বিষ্ণু বলে নয়—জাতির ভাগ্যবিধাতা বলে বরণ করব।

 ডিসেম্বর ১৯২২