পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশেষত পাঞ্জাবের যুবকদের প্রতি আমার অন্তরের উদ্বেল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ্যে ঘোষণা করি। যতীন্দ্রনাথ দাস ও তাঁহার বাঙালী সহযাত্রীরা পাঞ্জাবের জেলে যখন অবস্থান করিতেছিলেন তখন তাঁহাদের জন্য আপনারা যাহা করিয়াছেন তাহার জন্যই আমার এই কৃতজ্ঞতা। তাঁহাদের পক্ষে মামলা চালাইবার ব্যবস্থা করা, যতদিন তাঁহারা অনশন ধর্মঘট চালাইয়াছিলেন ততদিন তাঁহাদের জন্য উদ্বেগ ও কাতরতা ভোগ করা, যতীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর যে সহানুভূতি, স্নেহ ও সম্মান আপনারা দেখাইয়াছেন তাহা বাঙালীর মর্মস্থলে আলোড়ন জাগাইয়াছে। লাহোরে বন্দী রক্ষা কমিটি যাহা করিয়াছেন তাহাতেও সন্তুষ্ট না হইয়া কমিটির সদস্যরা মহান শহীদের শবদেহ লইয়া কলিকাতা পর্যন্ত গিয়া আমাদের হাতে ঐ দেহ অর্পণ করিয়াছিলেন। আমরা আবেগপ্রবণ জাতি। আপনাদের হৃদয়ের বিশালতা দেখিয়া আমরা যে আপনাদের প্রতি কত দূর অনুরক্ত হইয়াছি তাহা বর্ণনা করিতে পারি না। বাংলার এক ঘন তমিস্রার দিনে পাঞ্জাব তাহার জন্য যাহা করিয়াছে বাংলা তাহা চিরদিন মনে রাখিবে।

 আপনাদের একজন বিশিষ্ট নেতা ডা. আলম একদিন কলিকাতায় যতীন্দ্রনাথের কথা বলিতে গিয়া আমাদের বলিয়াছিলেন যে সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হইয়া পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যায় এবং সূর্যাস্তের পর চন্দ্র পশ্চিম দিগন্তে উদিত হইয়া পূর্ব দিগন্তের দিকে অগ্রসর হয়। যতীনের জীবন ও মৃত্যুকে ইহার সঙ্গে তুলনা করা চলে। তিনি জীবিতকালে কলিকাতা হইতে লাহোর গিয়াছিলেন। মৃত্যুর পর কলিকাতায় তাঁহার মৃতদেহ আবার নীত হয়। মৃত মৃৎভাণ্ড রূপে নয়। পবিত্রতা, মহত্ত্ব ও দিব্যতার প্রতীকরূপেই তাঁহার দেহ কলিকাতায় ফিরিয়া গিয়াছিল। যতীন আজ মৃত নয়। অনাগত কালের গতি-নির্দেশক রূপে আকাশপটে শুভ্র শুকতারা রূপে তিনি বিরাজ করিতেছেন। তিনি জীবিত আছেন তাঁহার অমর আত্মত্যাগ ও অনৈসর্গিক দুঃখবরণে। তিনি বাঁচিয়া আছেন স্বপ্ন রূপে, আদর্শ রূপে, মানবতার মধ্যে যাহা পবিত্রতম ও মহত্তম তাহার প্রতীক রূপে। আমি বিশ্বাস করি, তিনি তাঁহার আত্মাহুতির মধ্য দিয়া শুধু ভারতের আত্মাকে উদ্বোধিত করেন নাই—যে প্রদেশে তিনি জন্মিয়াছিলেন ও যে প্রদেশে তিনি মৃত্যু বরণ করিয়াছিলেন এই দুই প্রদেশকে তিনি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। আধুনিক যুগের এই দধীচির তপস্যাক্ষেত্র আপনাদের এই মহান নগরী; আমি তাই আপনাদের ঈর্ষা করি।

১০৯