আমার নিজস্ব মত হইল পরাধীন জাতির রাজনীতি ভিন্ন আর কিছুই নাই। পরাধীন দেশে যে-কোনো সমস্যার কথাই আমরা ভাবি-না কেন, ঠিকভাবে বিশ্লেষণ করিলে দেখা যাইবে যে সব সমস্যারই মূলে আছে রাজনৈতিক সমস্যা। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ বলিতেন জীবন পূর্ণাঙ্গ এবং অর্থনীতি বা শিক্ষানীতি হইতে রাজনীতিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। খণ্ড খণ্ড ভাবে ভাগ করা যায় না। জাতীয় জীবনের সকল দিক ও পর্যায় পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত। ফলত পরাধীন জাতির সকল দোষ ও ত্রুটির মূল খুঁজিলে আমরা দেখিব যে রাজনৈতিক হেতুই সকলের মঁলে—আর সেই হেতু হইল রাজনৈতিক দাসত্বের হেতু। ফলে ছাত্ররা, কিভাবে আমাদের রাজনৈতিক মুক্তিলাভ হইবে—এই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের প্রতি অন্ধ থাকিতে পারে না।
গ্রন্থকীটের প্রয়োজন নাই
সাধারণভাবে জাতীয় কাজের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নাই; তাহা হইলে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকিবে কেন তাহা আমরা বুঝি না। যদি সকল প্রকার জাতীয় কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকে তবে তাহা আমি বুঝিতে পারি, কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা অর্থহীন। যদি পরাধীন দেশের সকল সমস্যাই মূলত রাজনৈতিক সমস্যা হইয়া থাকে তবে সকল জাতীয় কর্মই প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক চরিত্রসম্পন্ন। কোনো স্বাধীন দেশেই রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা নাই, বরং রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করিতে ছাত্রদের উৎসাহ দেওয়া হইয়া থাকে। এই উৎসাহ ইচ্ছা করিয়াই দেওয়া হয় কেননা ছাত্র সম্প্রদায়ের মধ্য হইতেই রাজনৈতিক চিন্তানায়ক ও নেতা গড়িয়া উঠেন। যদি ভারতে ছাত্ররা রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ না করে তবে আমরা কোথা হইতে রাজনৈতিক কর্মী সংগ্রহ করিব, কোথায় তাহাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ দিব? তা ছাড়া ইহাও স্বীকার করিতে হইবে যে চরিত্র ও মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনের জন্য ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করা আবশ্যক। কর্মরহিত চিন্তা চরিত্রগঠনের পক্ষে যথেষ্ট নয়, এবং এইজন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, শৈল্পিক ইত্যাদি স্বাস্থ্যপ্রদ কর্মে অংশ গ্রহণ চরিত্র গঠনের পক্ষে একান্ত আবশ্যক। গ্রন্থকীট, স্বর্ণপদকধারী ও অফিস-কেরানী উৎপাদন করাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ থাকিতে পারে না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়াসী
১১১