পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইবে চরিত্রবান মানুষ সৃষ্টি করিতে যাহারা দেশের জন্য জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহত্ত্ব অর্জন করিবে।

 বর্তমান সময়ের অন্যতম আশার কথা এই যে সারা ভারতে একটি খাঁটি ছাত্র আন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছে। আমি মনে করি ইহা বৃহত্তর যুব-আন্দোলনেরই একটি পর্যায়। গত দশকের ছাত্র-সম্মেলনগুলির সঙ্গে বর্তমানের ছাত্র-সম্মেলনগুলির অনেক পার্থক্য হইয়াছে। পূর্বেকার ছাত্রসম্মেলনগুলি অনুষ্ঠিত হইত সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায়। ঐ সম্মেলনগুলির প্রবেশদ্বারে উৎকীর্ণ থাকিত—রাজনীতির কথা মুখে আনিয়ো না।

 এই সম্মেলনগুলির সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম পর্বের অধিবেশনগুলির তুলনা করা যাইতে পারে। ঐ-সব অধিবেশনে প্রথম যে প্রস্তাব গৃহীত হইত তাহা হইল সম্রাটের প্রতি আমাদের আনুগত্য জ্ঞাপক প্রস্তাব। সৌভাগ্যবশত শুধু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সেই পর্বই নয়, ছাত্রসম্মেলনের অনুরূপ পর্বও আমরা পার হইয়া আসিয়াছি। আজিকার ছাত্রসম্মেলনগুলি অপেক্ষাকৃত মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এবং সম্মেলনে যাঁহারা যোগ দেন তাঁহারা ভারতীয় দণ্ডবিধি কর্তৃক আরোপিত শর্ত সাপেক্ষে ইচ্ছামতো চিন্তা করিয়াও কথা বলিয়া থাকেন।

অসন্তোষের অনুভূতি

আজিকার যুব-আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হইল অসন্তোষের অনুভূতি, প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি অসহিষ্ণুতা, নতুন ও উন্নততর ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য তীব্র আকুতি। দায়িত্ববোধ ও আত্মনির্ভরতার ভাব এই আন্দোলনকে পরিব্যাপ্ত করিয়া আছে। বর্তমান কালের তরুণেরা বয়োজ্যেষ্ঠদের হাতে সকল দায়িত্বভার তুলিয়া দিয়া তৃপ্ত থাকিতে পারে না। বরং তাহারা মনে করে দেশ ও দেশের ভবিষ্যতে প্রবীণদের যতটা অধিকার তাহার চেয়ে তাহাদেরই অধিকার বেশি। তাই দেশের পূর্ণতম দায়িত্ব গ্রহণ করা ও সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য নিজেদের যোগ্য করিয়া তোলা তাহাদের পরম কর্তব্য। ছাত্র-আন্দোলন বৃহত্তর যুব-আন্দোলনেরই একটি পর্যায় ও অংশ। তাই যুব-আন্দোলনের যে দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতা ও উদ্দেশ্য তাহা দ্বারাই ছাত্র আন্দোলনও অনুপ্রাণিত।

 আজিকার ছাত্র আন্দোলন দায়িত্বহীন বালক-বালিকাদের আন্দোলন নয়, সবচেয়ে ফলপ্রদ উপায়ে দেশের সেবার জন্য নিজেদের চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গড়িয়া

১১২