পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তরুণের স্বপ্ন

আমরা এ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়াছি একটা উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত—একটা বাণী প্রচারেব জন্য। আলোকে জগৎ উদ্ভাসিত করিবার জন্য যদি গগনে সূর্য উদিত হয়, গন্ধ বিতরণের উদ্দেশ্যে বনমধ্যে কুসুমরাজি যদি বিকশিত হয়, অমৃতময় বারিদান করিতে তটিনী যদি সাগরাভিমুখে প্রবাহিত হয়— যৌবনের পূর্ণ আনন্দ ও ভরা প্ৰাণ লইয়া আমরাও মর্ত্যলোকে নামিয়াছি একটা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যে অজ্ঞাত গূঢ় উদ্দেশ্য আমাদের ব্যৰ্থ জীবনকে সাৰ্থক করিয়া তোলে তাহা আবিষ্কার করিতে হইবে— ধ্যানের দ্বারা, কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার দ্বারা।

 যৌবনের পূর্ণ জোয়ারে আমরা ভাসিযা আসিয়াছি সকলকে আনন্দের আস্বাদ দিবার জন্য, কারণ আমরা আনন্দের স্বরূপ। আনন্দের মূর্ত বিগ্ৰহরূপে আমরা মর্ত্যে বিচরণ করিব। নিজের আনন্দে আমরা হাসিব— সঙ্গে সঙ্গে জগৎকেও মাতাইব। আমরা যেদিকে ফিরিব, নিবানন্দের অন্ধকার লজ্জায় পলায়ন করিবে, আমাদের প্রাণময় স্পর্শের প্রভাবে রোগ, শোক, তাপ দূর হইবে।

 এই দুঃখসংকুল, বেদনাপূর্ণ নরলোকে আমরা আনন্দ-সাগরের বান ডাকিয়া আনিব।

 আশা, উৎসাহ, ত্যাগ ও বীর্য লইয়া আমরা আসিয়াছি। আমরা আসিয়াছি সৃষ্টি করিতে, কারণ— সৃষ্টির মধ্যে আনন্দ। তনু-মন-প্ৰাণ, বৃদ্ধি ঢালিয়া দিয়া আমরা সৃষ্টি করিব। নিজের মধ্যে যাহা-কিছু সত্য, যাহা-কিছু সুন্দব, যাহা-কিছু শিব আছে— তাহা আমরা সৃষ্ট পদার্থেব মধ্যে ফুটাইয়া তুলিব। আত্মদানের মধ্যে যে আনন্দ সে আনন্দে আমরা বিভোর হইব, সেই আনন্দের আস্বাদ পাইয়া পথিবীও ধন্য হইবে।

 কিন্তু আমাদের দেওয়ার শেষ নাই; কর্মেরও শেষ নাই, কারণ—

"যত দেব প্রাণ বহে যাবে প্রাণ
ফুরাবে না আর প্রাণ;
এত কথা আছে এত গান আছে
এত প্ৰাণ আছে মোর;
এত সুখ আছে, এত সাধ আছে প্রাণ হয়ে আছে ভোর।”