পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভাবাবর্ত

বর্তমানে ভারতে আমরা ভাবধারার ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে বাস করিতেছি। চারিদিক হইতে বিচিত্র বিরুদ্ধ ও অন্তঃসলিলা স্রোত বহিয়া আসিতেছে। এক বিচিত্র মিলন-মিশ্রণ চলিতেছে। ভাবধারার যে বিভ্রান্তি উপস্থিত হইয়াছে তাহার মধ্যে বসিয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে ভালো ও মন্দ, ন্যায় ও অন্যায় স্থির করা সম্ভব নয়। আমরা যদি ইতিহাসের রায় অগ্রাহ্য না করি, স্যার ফ্ল্যাণ্ডার্স পেত্রির মতো চিন্তাবিদের সুবিবেচিত মত উপেক্ষা না করি, তবে আমাদের স্বীকার করিতে হইবে যে পুরাতন ও জীর্ণ সভ্যতাগুলিরও পুনরুজ্জীবন ঘটানো সম্ভব। আপনারা যদি আমার এই মত সমর্থন না করেন তবে সভ্যতার উত্থান ও পতনের পিছনে কোন নিয়ম বর্তমান তাহা আপনাদেরই অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিতে হইবে। এই নিয়ম আবিষ্কার করিতে পারিলে তবেই আমরা দেশবাসীকে বলিতে পারিব, দেখুন, আমাদের এই প্রাচীন দেশে নূতন, স্বাস্থ্যবান ও প্রগতিশীল জাতি সৃষ্টি করিতে হইলে আমাদের কী করিতে হইবে।

 যদি আমাদের ভাবজগতে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনিতে চাই তবে আমাদের সম্মুখে এমন অদর্শ স্থাপন করিতে হইবে যাহা আমাদের সমগ্র জীবনকে প্রাণচঞ্চল করিয়া তুলিবে। স্বাধীনতাই সেই আদর্শ। কিন্তু স্বাধীনতা কথাটির বিচিত্র অর্থ আছে, আমাদের দেশেও স্বাধীনতার ধারণা ক্রমবিবর্তিত হইয়াছে। স্বাধীনতা বলিতে আমি বুঝি সর্বাঙ্গীণ মুক্তি—ব্যক্তির মুক্তি ও সমাজের মুক্তি; পুরুষের মুক্তি ও নারীর মুক্তি; ধনীর মুক্তি ও দরিদ্রের মুক্তি; সকল ব্যক্তির মুক্তি ও সকল শ্রেণীর মুক্তি। স্বাধীনতা বলিতে শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা বুঝায় না। ধনের সম-বণ্টন, জাতিপ্রথা ও সামাজিক অন্যায়ের, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অবসানও বুঝায়। কঠোর বাস্তবপরায়ণ পুরুষ ও নারীর কাছে এই আদর্শ হয়তো স্বপ্ন বলিয়া বিবেচিত হইবে— কিন্তু একমাত্র এই আদর্শই আত্মার ক্ষুধা মিটাইতে পারে।

 আমাদের জাতীয় জীবনের যত দিক আছে স্বাধীনতারও তত দিক আছে। এমন অনেকে আছেন যাঁহারা স্বাধীনতার কথা যখন বলেন তখন স্বাধীনতার একটি বিশেষ দিকের কথাই বলেন। স্বাধীনতা সম্পর্কে সংকীর্ণ ধারণা কাটাইয়া উঠিয়া উহার পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাঙ্গীণ ধারণা গ্রহণ করিতে আমাদের

১১৬