পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কয়েক দশক সময় লাগিয়াছে। যদি সত্যই আমরা স্বাধীনতার পূজারী হই এবং কোনো স্বার্থসাধনের উদ্দেশ্যে নয়, স্বাধীনতার জনাই স্বাধীনতা ভালোবাসি, তাহা হইলে আমাদের এ কথা বুঝিবার সময় আসিয়াছে যে প্রকৃত স্বাধীনতা বলিতে সর্বপ্রকার বন্ধন হইতে মুক্তি বুঝায় এবং শুধু ব্যক্তির স্বাধীনতা নয়, সমগ্র সমাজের স্বাধীনতাও বুঝায়। ইহাই এ যুগের আদর্শ এবং যে স্বপ্ন আমার আত্মাকে অধিকার করিয়াছে তাহা হইল পূর্ণ, স্বাধীন ও মুক্ত ভারতের আদর্শ।

 স্বাধীনতা লাভের একমাত্র উপায় হইল স্বাধীন মানুষরূপে নিজেদের গণনা করা, অনুভব করা। আমাদের অন্তরে পূর্ণ বিপ্লব ঘটা চাই। মুক্তির মদে আমাদের মাতাল হইতে হইবে। মুক্তির মদে মাতাল নরনারীই মানবতার মুক্তি সাধন করিতে পারিবে। যখন “মুক্ত হইবার ইচ্ছা” আমাদের মধ্যে জাগিয়া উঠিবে তখনই আমরা কর্মসাগরে ঝাঁপ দিব। সাবধানী বাণী আর আমাদিগকে আটকাইয়া রাখিতে পারিবে না। সত্য ও গৌরবের আহ্বান প্রিয় লক্ষ্যের অভিমুখে আমাদের লইয়া চলিবে।

 বন্ধুগণ, আমার জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আমি যাহা ভাবি, অনুভব করি, স্বপ্ন দেখি, আমার সকল কর্মের পিছনে যে উদ্দেশ্য ও প্রেরণা বর্তমান, তাহা আমি আপনাদের কাছে বুঝাইয়া বলিবার চেষ্টা করিয়াছি। জানি না ইহা আপনাদের ভালো লাগিল কিনা। কিন্তু একটি বিষয় আমার নিকট খুব স্পষ্ট— জীবনের একটিই উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য আছে— তাহা হইল সর্বপ্রকার বন্ধন হইতে মুক্তি। এই মুক্তির ক্ষুধাই হইল আত্মার সঙ্গীত। নবজাতকের প্রথম ক্রন্দনধ্বনি, যে বন্ধনের মধ্যে সে আসিয়া পড়িল উহার বিরুদ্ধে তাহার বিদ্রোহ ঘোষণা। আপনারা আপনাদের নিজেদের মধ্যে ও আপনাদের স্বদেশবাসীর মধ্যে মুক্তির এই তীব্র ইচ্ছা জাগাইয়া তুলন—আমার নিশ্চিত বিশ্বাস, ভারত তাহা হইলে অচিরে স্বাধীন হইবে।

 ভারত স্বাধীন হইবেই— সে বিষয়ে তিলমাত্র সংশয় নাই। নিশাবসানে যেমন দিবসের আবির্ভাব অনিবার্য ইহাও তেমনি অনিবার্য। পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নাই যাহা ভারতকে আর বেশিদিন পরাধীন করিয়া রাখিতে পারে। কিন্তু আসুন, আমরা এমন এক ভারতের স্বপ্ন দেখি যাহার জন্য আমরা আমাদের সর্বস্ব— এমন-কি জীবনও—দান করিতে পারি। যাহার জন্য আমাদের প্রিয়জনদেরও ডালি দিতে হইতে পারে। স্বাধীনতা সম্পর্কে আমার

১১৭