পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কী ধারণা তাহা আমি আপনাদের বলিয়াছি এবং কোন ভারতবর্ষ আমি গড়িয়া তুলিতে চাই তাহাও আমি আপনাদের বলিয়াছি। পূর্ণ মুক্ত ভারত বিশ্ববাসীর কাছে মুক্তির নববাণী প্রচার করুক।

 আমাকে হয়তো উগ্র জাতীয়তাবাদী বলা হইবে, তবু আমি বলিব যে ভারতের একটি মিশন আছে যাহা তাকে উদ্‌যাপন করিতে হইবে, ঐ মিশনের জন্যই ভারত বাঁচিয়া আছে। এই ‘মিশন’ কথাটির মধ্যে কোনো রহস্য নাই। মানবজীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে বিশ্বের সংস্কৃতি ও সভ্যতায়, ভারতকে কিছু মৌলিক অবদান রাখিতে হইবে। তাহার বর্তমান অবনতি ও দাসত্বের মধ্যেও সে যে অবদান রাখিতেছে তাহাও তো কম নয়। একবার ভাবিয়া দেখুন আপন পথে ও আপন প্রয়োজনানুসারে বিকাশলাভের স্বাধীনতা যখন সে ফিরিয়া পাইবে তখন তাহার অবদান কত মহৎ হইবে।

 এ দেশে এমন লোক আছেন—তাঁহাদের মধ্যে অনেকেই প্রসিদ্ধ ও সম্মানী ব্যক্তি—মুক্তির আদর্শের সর্বাঙ্গীণ প্রয়োগে তাঁহারা সম্মতি দিবেন না। তাঁহাদের খুশি করিতে না পারিলে আমরা দুঃখিত হইব; কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা সত্য, ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত আদর্শ পরিত্যাগ করিব না। অন্যেরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিক বা না দিক আমরা আমাদের পথে চলিবই। আপনারা নিশ্চিন্ত হোন, যদি মুষ্টিমেয় কিছু লোক আমাদের পরিত্যাগও করে তবু হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক আমাদের মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিবে। বলুন, অন্যায় ও অসাম্যের সঙ্গে আমরা কোনোরকম আপস করিব না।

 বন্ধুগণ, এখন সময় আসিয়াছে মুক্তিপ্রেমিক সকলের এক সুখী ঐক্যবন্ধনে আবদ্ধ হইয়া মুক্তি বাহিনী গড়িয়া তোলার।

 এই বাহিনী শুধু মুক্তিযুদ্ধে শামিল হইবার যোদ্ধৃদল পাঠাইবে না: মুক্তির নূতন আদর্শ প্রচারের জন্য প্রচারকও পাঠাইবে। আপনাদের মধ্য হইতেই এই প্রচারক ও যোদ্ধার দল গড়িয়া তুলিতে হইবে। আমাদের কর্মসূচীতে একদিকে ব্যাপক ও নিবিড় প্রচারের ব্যবস্থা থাকিবে, আর-এক দিকে দেশব্যাপী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন গড়িয়া তোলা হইবে। আমাদের প্রচারকরা কৃষকদের মধ্যে ও কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে যাইবে ও তাহাদের কাছে মুক্তির নূতন বাণী প্রচার করিবে। তাহারা তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করিবে ও সারা দেশে যুবলীগ সংগঠিত করিবে। দেশের সমগ্র নারীশক্তিকে তাহাদের জাগাইয়া তুলিতে

১১৮