পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইবে, কেননা সমাজে ও রাষ্ট্রে পুরুষের সমান সহযোগিণী রূপে স্থান লইবার জন্য এখন তাহাদের আগাইয়া আসিতে হইবে।

 বন্ধুগণ, আপনারা অনেকেই নিশ্চয়ই এখন ভারতীয় কংগ্রেসে যোগ দিবার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করিতেছেন। আপনাদের দেশে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসই নিঃসন্দেহে বৃহত্তম জাতীয় সংগঠন। কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শক্তি, প্রভাব ও ক্ষমতা নির্ভর করে শ্রমিক আন্দোলন, যুব-আন্দোলন, কৃষক-আন্দোলন, নারী-আন্দোলন, ছাত্র-আন্দোলন ইত্যাদির উপর। যদি আমরা আমাদের শ্রমিক, কৃষক, অনুন্নত শ্রেণী, যুবগোষ্ঠী ছাত্রসমাজ ও নারী জাতিকে যুক্ত করিতে পারি তাহা হইলে আমরা এমন শক্তি জাগ্রত করিতে পারিব যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আমাদের স্বাধীনতা আনিয়া দিতে সক্ষম হইবে। অতএব, যদি আপনারা সকলে ফলপ্রদ উপায়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সেবা করিতে চান, তবে আমি যে সংশ্লিষ্ট আন্দোলনগুলির কথা এইমাত্র বলিলাম সেগুলিকে আপনারা একসঙ্গে জোরদার করুন।

 চীন আমাদের পাশের দেশ। তাই সাম্প্রতিক চীনা ইতিহাস হইতে আমরা পাঠ নিব। চীনের ছাত্ররা তাহাদের মাতৃভূমির জন্য কী করিয়াছে তাহা লক্ষা করুন। আমরাও কি ভারতের জন্য ঐরূপ করিতে পারি না? আধুনিক চীনের নবজাগৃতি আনিয়াছে চীনের ছাত্রছাত্রীগণ। তাহারা একদিকে গ্রামে গ্লামে, শহরে শহরে, কলকারখানায় গিয়া নূতন মুক্তির বাণী প্রচার করিয়াছে, আর একদিকে এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সারা চীনকে সংগঠিত করিয়াছে। ভারতেরও আমাদের তাহাই করিতে হইবে। মুক্তি লাভের কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। মুক্তির পথ নিঃসন্দেহেই কণ্টকাকীর্ণ, কিন্তু উহাই গৌরব ও অমরত্ব লাভেরও পথ। আসুন, আমরা অতীতের বন্ধন চূর্ণ করি, যুগ যুগ ধরিয়া যে-সকল বাধা আমাদের বন্ধ করিয়া রাখিয়াছে সেগুলিকে ধ্বংস করি এবং যথার্থ তীর্থযাত্রীর মতো কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া মুক্তির লক্ষ্য অভিমূখে আগাইয়া চলি। স্বাধীনতাই জীবন, স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু বরণ করিলে শাশ্বত গৌরব অর্জন করা যাইবে। সেজন্য আসুন আমরা স্বাধীন হইবার সংকল্প লই, স্বাধীনতা লাভের জন্য মৃত্যু বরণ করিতে প্রস্তুত হই। আমরা আমাদের আচরণ ও চরিত্রের দ্বারা এ কথা যেন প্রমাণ করিতে পারি যে আমরা মহান শহীদ যতীন্দ্রনাথ দাসের স্বদেশবাসী হইবার যোগ্য। বন্দেমাতরম্।

 অক্টোবর ১৯২৯

১১৯