পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থাকে! জীবনের অন্য কোন আনন্দ এই অপার আনন্দের সহিত তুলনীয় হইতে পারে? ইহার সহিত তুলনায় আর সকল অবস্থাই তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর। ইতিপূর্বে সামাজিক নৈতিকতার এবং জাতীয়তাবাদের তত্ত্বগত ধারণার সহিত কিছুটা পরিচিত হইয়াছিলাম। কিন্তু সেই দিনই প্রায় সকল ধারণার পরীক্ষা হইয়া গেল— তাহা অগ্নিপরীক্ষাই বটে। সেই কঠিন পরীক্ষায় সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হইবার পর আমি বুঝিতে পারিলাম আমার জীবনের গতি ও ভবিষ্যৎ কার্যক্রম চিরকালের জন্য নির্ধারিত হইয়া গিয়াছে।

 বন্ধুগণ, তোমরা হয়তো ভাবিতেছ যে আমি এক অদ্ভুত ব্যক্তি, তোমাদের সমস্যার ভিতরে প্রবেশ করিয়া নিজের কথাই চর্চা করিতে আরম্ভ করিয়াছি। কিন্তু আমি এখানে কেন আসিয়াছি? তোমরা কি আমার আসিবার উদ্দেশ্য অনুমান করিতে পারিয়াছ? নিশ্চয়ই আমি নীতিজ্ঞান ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে নিছক দীর্ঘ তত্ত্বোপদেশ দিতে আসি নাই। আমার জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ সত্য তোমাদের সম্মুখে উপস্থাপনের জন্য আমি আসিয়াছি। ইহা কি সত্য নয় যে একমাত্র অভিজ্ঞতা ও দুঃখবরণের মধ্য দিয়া যাহা আমরা লিখিয়া থাকি তাহারই যথার্থ মূলা আছে?

 ভারতের সর্বত্র আজ এক ব্যাপক আলোড়ন শুরু হইয়াছে। বিভিন্ন মত ও আদর্শের সংঘাত চলিতেছে। নানা প্রকৃতির আন্দোলনের উদ্ভব হইয়াছে। তাহার কতকগুলি সংস্কারমূলক। বর্তমান অবস্থার উন্নয়নই তাহাদের লক্ষ্য। অপর কতকগুলি বৈপ্লবিক ধরনের—বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন করিয়া সম্পূর্ণরূপে নূতন ব্যবস্থার পত্তন করিতে চায়। এই সংঘাতের মধ্য দিয়া নূতন ভারতবর্ষ জন্মগ্রহণ করিতেছে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের দিকে তাকাইয়া তাহার গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করা সহজ নহে। যাহারা সজীব ও তরুণ, মহান আদর্শের দ্বারা উদ্বুদ্ধ অথচ আত্ম-সংযত, যাহারা স্বীয় আদর্শের সহিত জাতির আদর্শের সার্থক সমন্বয় স্থাপন করিয়াছে, যাহারা ইতিহাসপাঠ সম্পূর্ণ করিয়া শিক্ষণীয় বিষয় আত্মস্থ করিয়াছে, কেবলমাত্র তাহারাই এই প্রকার দায়িত্বশীল কাজের উপযুক্ত। বর্তমানের দুর্যোগপূর্ণ সময়ে একমাত্র তাহারাই ভবিষাৎ অগ্রগতির পথের সন্ধান আবিষ্কারের সুযোগ দিতে পারে।

 ভারতে সাম্প্রতিককালে উদ্ভূত বিভিন্ন আন্দোলনগুলি একটি একটি করিয়া বিশ্লেষণের পর সেগুলি সম্বন্ধে মত প্রকাশ করিতে হইলে, দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন এবং একদিনের বক্তৃতায় তাহা সমাধা করাও সম্ভব নয়।

১২১