পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই অন্তরাত্মার জাগরণ চাই। একমাত্র এই জাগরণই আমাদের জীবনের মৌল রূপান্তর ঘটাইবে। আধাআধি সংস্কার কিম্বা বাহ্যিক পালিশে কোনো কাজ হইবে না। সম্পূর্ণ নূতন জীবনে উত্তরণের জন্য আমাদের চাই সর্বাঙ্গীণ পরিবর্তন। এই পরিবর্তনকে আমরা ‘সম্পূর্ণ বিপ্লব’ আখ্যায়িত করিতে পারি।

 ‘বিপ্লব’ কথাটি শুনিয়া আপনারা চমকিত হইবেন না। বিপ্লব কোন্ পথে প্রবাহিত হইবে সে সম্পর্কে আমাদের মতভেদ থাকিতে পারে; কিন্তু বিপ্লবে বিশ্বাস করে না, এমন একটি লোকেরও এ-যাবৎ সাক্ষাৎ পাই নাই। ‘বিবর্তন’ ও ‘বিপ্লব’-এর মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নাই। অল্পসময়ের মধ্যে বিবর্তন বিপ্লব ছাড়া আর কিছু নয়, দীর্ঘতর সময়ের মধ্যে সম্পাদিত বিপ্লবকেই বলে বিবর্তন। এই দুইটি প্রত্যয়ের পশ্চাতে রহিয়াছে পরিবর্তনের ধারণা। দুইটি প্রত্যয়েরই নির্দিষ্ট স্থান রহিয়াছে। একটি আরএকটির বিকল্প হইতে পারে না।

 আগেই বলিয়াছি, ভালো ও মন্দ সম্বন্ধে কতকগুলি প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন আমাদের করিতে হইবে। আমি আরো বলিয়াছি আমাদের গতানুগতিক অস্তিত্বের কাঠামোকে ঢালিয়া সাজা প্রয়োজন। সেই পথেই জাতির প্রকৃত সংহতি সৃষ্টি হইয়া সভ্যজগতে আমাদের সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠা দান করিবে। যে জীবন প্রাত্যহিকতার ঊর্ধ্বে কোনো বৃহত্তর এবং মহত্তর আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, তাহার কিছু মূল্য আছে। যে জাতির কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নাই, তার বাঁচিবারও অধিকার নাই। আমি সেজন্য এ কথ্য কখনোই বলিব না যে কেবলমাত্র সংকীর্ণ স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই কোনো জাতি উন্নতির চেষ্টা করিবে। মানবসমাজে ঔদার্য ও মাহাত্ম্য বৃদ্ধির জন্য জাতিকে অগ্রসর হইতে হইবে, যাহাতে শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবী মানুষের পক্ষে মহত্তর ও সুন্দরতর আবাসযোগ্য স্থান হইয়া উঠে।

 জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদানই ভারতে রহিয়াছে— বৈষয়িক, নৈতিক, আত্মিক—যে-কোনো দিকেই তাকাই-না কেন, ইহার কোনো অভাব গোচরে আসে না। ভারতের ইতিহাস কত প্রাচীন তাহার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হইতে পারে, কিন্তু আসল কথা এই ভারতবর্ষ মৃত নয়, এখনো জীবিত। ভারতবর্ষ কেন বাঁচিয়া আছে? শুধু কি তাহার গৌরব ও মহত্ত্বের পুনরুজ্জীবনের জন্য? ভারতবর্ষ বাঁচিয়া রহিয়াছে এই কারণে যে

১২৩