পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মানুষ অপর কোনো স্বাধীন দেশের অর্জিত অভিজ্ঞতা হইতে অথবা সে দেশের ইতিহাস পাঠ করিয়া সেখানকার পরিস্থিতি ও পরিবেশের মননার দ্বারা স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করিয়া থাকি। স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে যে-কোনো জাতিকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়া অগ্রসর হইতে হইবে।

 এই পরীক্ষার প্রকৃতি কী? একদিকে সকল প্রকার জাতীয় অবমাননার বিরুদ্ধে, জাতিধর্মের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা তীব্রতর করিয়া তুলিতে হইবে, অপরপক্ষে স্বাধীনতার জন্য আকাঙ্ক্ষা ক্রমশই প্রবলতর করিয়া তুলিতে হইবে। বাস্তবিকপক্ষে আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে এই কঠিন পরীক্ষা ও তপস্যার অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে। এই সংগ্রামে উপযুক্ত উদ্দীপনা সঞ্চারের জন্য আমাদের শুরু করিতে হইবে ইতিহাস পাঠ দিয়া এবং ভারতবর্ষের জনগণের পতনের কারণ নির্ণয় করিতে হইবে। অতঃপর প্রকৃত আদর্শ সন্বন্ধে গভীরভাবে পর্যালোচনার সময় মনোযোগ সহকারে পরাধীন দেশের অবস্থার সহিত স্বাধীন দেশের অবস্থার তুলনা করিতে হইবে।

 Baptism, মন্ত্রগুপ্তি অনুষ্ঠান বা দীক্ষার একটিই অর্থ: স্বাধীনতার বেদীতে আত্মনিবেদনের সংকল্প গ্রহণ। সম্পর্ণরূপে আত্মনিবেদন একদিনে আয়ত্ত করা যায় না। স্বাধীনতার জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা যত প্রবল হইবে ততই আমরা আমাদের হৃদয়ে স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করিব। ভাষায় এই অনুভুতি ব্যক্ত করা যাইবে না। এই আনন্দের সন্ধান পাইলে জীবনের মহত্তর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের ধীরে ধীরে উপলব্ধি করিতে হইবে। এই উপলব্ধি আমাদের বিপ্লবের পথে পরিচালিত করিবে; আমাদের সকল অনুভূতি, আশাআকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ রূপে রূপান্তর ঘটিবে। অতঃপর আমাদের জীবনে একমাত্র স্বাধীনতারই মূল্যে থাকিবে এবং সকল অন্তর দিয়া, আর কাহারো নহে কেবল স্বাধীনতার পূজা করিয়া, জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির, আমাদের মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটিবে। তখন আমরা একমাত্র সেই আদর্শকেই অনুসরণ করিব। এই রূপান্তরকালের অনুভূতির সঠিক বিবরণ ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু এ কথা বলা যায় একবার এই রূপান্তর সম্পূর্ণ হইয়া গেলে আমরা নবজন্ম লাভ করিয়া প্রকৃত অর্থে ‘দ্বিজত্ব’ প্রাপ্ত হইব। তারপর আমাদের অন্তর সর্বদাই স্বাধীনতার স্বাদে সেই ভাবনায় ভরিয়া থাকিবে। আমরা তাহার স্বপ্ন দেখিতে থাকিব। স্বাধীন হইবার আকাঙ্ক্ষা, যাহা জীবনের সর্বোত্তম আকাঙ্ক্ষা—আমাদের সকল কর্মে তাহার অভিব্যক্তি হইতে থাকিবে।

১২৫