পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক কথায় বলিতে হয়: আমরা স্বাধীনতার ভাবনায় উদ্বেলিত হইয়া, সেই অমূল্য সম্পদ করায়ত্ত করিতে জীবনের সব পণ করিব।

 স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা একবার হৃদয়ে জাগ্রত হইলে, তাহা তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মনে কোনো শান্তি থাকবে না। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের সকল প্রকার সংগত ও সম্ভাব্য পথ গ্রহণ করিতে হইবে। সেই উদ্দেশ্যে এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সকল প্রকার শক্তি ও তেজ সংহত করিতে হইবে। এতকাল যাহা শিখিয়াছি তাহার অনেক কিছুই ভুলিয়া যাইতে হইবে। আর এতদিন যাহা শিখি নাই, তাহা নূতন করিয়া এখন শিখিতে হইবে। যেহেতু স্বাধীনতার গুরু দায়িত্ব আমাদের বহন করিতে হইবে, সে কারণে আমাদের শরীর ও মনের শক্তি নূতন উদ্যমে বৃদ্ধি করিতে হইবে এবং এই উদ্দেশ্যে যেমন পড়িতে হইবে নূতন পাঠ, তেমনি সাময়িক উপভোগ এবং বিলাসব্যসনগুলির মতো জীবনের বহির্ভাগের মৃত খোলস ঝাড়িয়া ফেলিয়া দিতে হইবে। এক কথায়, পুরানো অভ্যাস বর্জন করিয়া আমাদের সম্পূর্ণরূপে জীবনের নূতন গতিপথ অবলম্বন করিতে হইবে। এইভাবে শক্তিমান ও কলুষমুক্ত হইয়া সামগ্রিকভাবে জীবন পূর্ণতার প্রতিচ্ছবি হইয়া উঠিবে এবং আমরা স্বাধীনতা লাভের উপযুক্ত হইয়া উঠিব।

 আসলে বাক্তিমানুষ একটি সামাজিক সত্তা। তাহাকে সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিলে, তাহার ব্যক্তিত্বের বিকাশ রুদ্ধ হইয়া যায়। শরীরের ও আত্মার সর্বাঙ্গীণ বৃদ্ধির এবং মানসিক পুষ্টির জন্য ব্যক্তিকে সমাজের উপর বহুলাংশে নির্ভর করিতে হইবে। আমাদের উপলব্ধি করিতে হইবে যে সমাজের অবাধ উন্নতি ব্যতিরেকে ব্যক্তি-মানুষের একক উন্নতির কোনো সার্থকতা বা ব্যবহারিক মূল্য নাই। কৃচ্ছসাধক সন্ন্যাসীর জীবনাদর্শ সমাজে গ্রহণীয় নয়। আদর্শের সামাজিক কোনো তাৎপর্য নাই। আমার নিকট তাহার কোনো গুরুত্ত্বও নাই, সুতরাং যদি স্বাধীনতাকে আমাদের জীবনের মৌলিক নীতিরূপে গ্রহণ করি এবং ইহাতেই আমাদের সকল উদ্যোগ ও কর্মের প্রেরণার উৎসমূল রূপে স্বীকার করি, তাহা হইলে এই মহান আদর্শের ভিত্তিপ্রস্তরের উপর সমাজসংস্কারের উৎসমূল স্থাপন করিতে হইবে। অচিরেই আমরা হৃদয়ঙ্গম করিব, যে সক্রিয় নীতিটি স্বাধীনতার আদর্শের পিছনে নিহিত রহিয়াছে, তাহা সমাজ-বিপ্লব ছাড়া আর কিছু নয়। সমগ্র সমাজের স্বাধীনতার কথা বলিলে

১২৬