পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বাধীনতার অখণ্ডরূপ

অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি মহাশর ও সমবেত বন্ধুবর্গ:

আজকাল দেশ-বিদেশে এত প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলন থাকিতে—যুব-আন্দোলন আবার আরম্ভ হইল কেন? ইহার কারণ নির্দেশ করা খবেই সহজ। সব দেশে তরুণ সমাজ অসন্তুষ্ট ও অসহিষ্ণু হইয়া পড়িয়াছে। তাহারা যাহা চায়, তাহা পায় না, যে আদর্শকে ভালোবাসে সে আদর্শকে বাস্তবের মধ্যে মূর্ত করিয়া তুলিতে পারে না। তাই তাহারা বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছে এবং যে মানুষ বা যে ব্যবস্থা তাহাদের কর্ম পথে অন্তরায় হইয়াছে তাহা অপসারিত করিবার জন্য তাহারা বদ্ধপরিকর হইয়াছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার চাপ, বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের উপর বীতশ্রদ্ধ ভাব এবং নূতন কর্মের ও নূতন সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা —এই-সব কারণের সংমিশ্রণের ফলে যুব-আন্দোলনের উৎপত্তি।

 যুব-সমিতি গঠনের কাজে আজকাল অনেকে নিরত। কিন্তু যুব-আন্দোলনের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি বোঝেন কয় জন? যুব-সমিতিকে সেবা-সমিতির নামান্তর বলিয়া মনে করিলে চলিবে না। কংগ্রেস কমিটির নাম ও label বদলাইয়া যুব সমিতি গঠন করিলেও চলিবে না। প্রকৃতপক্ষে যুব-আন্দোলন একটা স্বতন্ত্র আন্দোলন, ইহার বিশিষ্ট আদর্শ আছে—বিশিষ্ট কর্মপ্রণালী আছে। সুতরাং কংগ্রেসের মধ্যে নেতৃত্ব বা মোড়লী করিবার আশা না থাকার দরুন যাঁহারা অনন্যোপায় হইয়া যুব-আন্দোলনের পাণ্ডা সাজেন তাঁহাদের দ্বারা যুব-আন্দোলনের কোনো সেবা বা উন্নতি হইবে না এবং চোখের সম্মুখে নূতন একটা আন্দোলন গড়িয়া উঠিতেছে দেখিয়া যাঁহারা স্থির থাকিতে না পারার দরুন যুব-আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষক হইয়া পড়েন তাঁহাদের দ্বারাও কোনো বড়ো কাজ হইবে না।

 আমি আপনাদের জিজ্ঞাসা করিতেছি—বাংলার একপ্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া বলুন, এই আন্দোলনে কয়জন খাঁটি কর্মী আছেন— যাঁহারা প্রকৃতপক্ষে যুব-আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও সার্থকতা উপলব্ধি করিয়া নিষ্কামভাবে এই কর্মে যোগদান করিয়াছেন, অবশ্য যুব-আন্দোলনের উদ্দেশ্য, অর্থ ও কর্মপ্রণালী যতই প্রচারিত হইতেছে ততই আন্দোলন ক্রমশ প্রসার লাভ করিতেছে। কিন্তু গোড়ায় একটি কথা বার বার

১৩০