পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিরুদ্ধে, বিজ্ঞতার বিরুদ্ধে এবং সর্বপ্রকার বন্ধনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়া আসিতেছে। আমি গত বৎসর নাগপুরে তরুণদের একটি সভায় বলিয়াছিলাম—The voice of Krishna was the voice of immortal youth—গীতার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের যে বাণীর ঝঙ্কার আমরা শুনিতে পাই, তাহা অমর তরুণাত্মারই বাণী।

 যাঁহারা মনে করেন যে যুব আন্দোলন সাগরপারের সামগ্রী—তার জন্ম ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দে এবং তার জন্মদাতা জার্মানীর Karl Fisher (কার্ল ফিসার) তাঁহারা কিছুই জানেন না এই পৃথিবীতে জরা বার্ধক্য যতদিন আছে— যুব-আন্দোলনও ততদিন আছে। তবে বর্তমান যুগে যুব-আন্দোলন বিরাট ও বিশিষ্ট রূপ ধারণ করিয়াছে এ বিষয় কোনো সন্দেহ নাই। যুব-আন্দোলনের পশ্চাতে একটা মহান আদর্শবাদ আছে। এ আদর্শবাদ নূতন হইলেও বহু পুরাতন, যুগে যুগে এই আদর্শ বাদই মানুষের প্রাণকে সঞ্জীবনী সুধায় ভরপুর করিয়া নূতন জীবন ও নূতন শক্তি দান করিয়াছে। অতি প্রাচীনকালে আমাদের এই দেশে মানুষ “ধর্ম-রাজ্যের” স্বপ্ন দেখিত। মানুষে তখন চাহিত—তখনকার সমাজ ও রাষ্ট্র ভাঙিয়া “ধর্ম-রাজ্য” স্থাপন করিতে। প্রাচীনকালে গ্রীস দেশে সেখানকার ঋষিরা স্বপ্ন দেখিত— Ideal Republic-এর—আদর্শ প্রজাতন্ত্রমূলক সমাজের। তার পর যুগের পর যুগ কত দেশে কত মনীষী কত utopia-র স্বপ্ন দেখিয়া আসিতেছেন। কেহ লিখিতেছেন New age-এর (নূতন যুগের) কথা— কেহ লিখিতেছেন great society-র (বৃহত্তর সমাজের) কথা—কেহ লিখিতেছেন millenium এর কথা— কেহ লিখিতেছেন অনাগত সত্য যুগের কথা—কেহ লিখিতেছেন Socialist State (সাম্যবাদমূলক রাষ্ট্রের) কথা। নানা দিক দিয়া, নানা ভাবে, নানা রূপের মধ্যে তরুণের প্রাণ যুগের পর যুগ একটা আদর্শ সমাজের এবং আদর্শ-মানুষের স্বপ্ন দেখিয়া আসিতেছে এবং সাধ্যমত তাহা বর্ণনা করিবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছে। বর্তমান যুগে কী প্রাচ্যে, কী পাশ্চাত্যে আমরা Superman (অতিমানুষ)-এর কথা শুনিতে পাই। Superman-এর মতবাদ অনেকে উপহাস করিয়া উড়াইয়া দেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইহা উপহাস করিবার বিষয় নয় কারণ ইহার মধ্যে একটা মহান সতা নিহিত আছে। Superman-এর যে রূপ জার্মান দার্শনিক Nietzsche (নীট্‌শে) দিয়াছেন অথবা ভারতের কোনো মনীষী দিবার চেষ্টা করিয়াছেন, তাহা

১৩২