পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আপনারা অখণ্ড সত্য বলিয়া গ্রহণ না করিতে পারেন—কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্য যে সাধু ও মনুষ্যজাতির পক্ষে কল্যাণকর এবং তাঁদের প্রচেষ্টা যে প্রশংসনীয় সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। যে জাতির শ্রেষ্ঠ মনীষীগণ Superman-এর (অতিমানুষের) স্বপ্ন দেখেন না—সে জাতির কি idcalism বা আদর্শবাদ আছে? এবং যে জাতির আদর্শবাদ নাই সে জাতি কি জীবন্ত—সে জাতি কি মহত্তর সৃষ্টির অধিকারী হইতে পারে?

 মানুষের সমস্ত প্রাণ যদি উদ্বুদ্ধ করিতে হয়— তাহার প্রত্যেক রক্তবিন্দুর মধ্যে যদি মৃতসঞ্জীবনী সুধা ঢালিতে হয়—তাহার অন্তর্নিহিত সমস্ত শক্তির স্ফুরণ যদি ঘটাইতে হয়— তাহা হইলে একটা মহত্তর আদর্শের আস্বাদ তাহাকে দেওয়া চাই। খ্রীষ্টীয়দের ‘বাইবেল’-এ (Bible) একটা কথা আছে— man does not live by bread alone—শুধু উদর পূরণের দ্বারা মানুষ বাঁচিয়া থাকিতে পারে না। তার জীবন ধারণের জন্য অন্যরকম খোরাকেরও প্রয়োজন আছে। মানুষ জানিতে চায় তার জীবনের উদ্দেশ্য কি—সে কেন বাঁচিয়া আছে তার জীবন ধারণের সার্থকতা কিসে। এ প্রশ্নের উত্তর সে যদি ঠিকমতো না পায়, তাহা হইলে সে জীবনে শান্তি পায় না—নিজের জীবন ব্যর্থ বলিয়া মনে করে এবং অন্তরের সব শক্তির উন্মেষ সাধন করিতে পারে না। কিন্তু এ আদর্শের অনুভূতি ও আস্বাদ জোর করিয়া কেহ দিতে পারে না। অনভূতি ও আস্বাদ নিজে যে পায় নাই—সে অপরকে তাহা কি করিয়া দিবে?

 স্বপ্ন অনেকের ছিল, অনেকের আছে, আমাদের স্বর্গীয় নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মহাশয়েরও একটা স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন ছিল তাঁর শক্তির উৎস, তাঁর আনন্দের নির্ঝর। তাঁর স্বপ্নের উত্তরাধিকারী আজ আমরা হইয়াছি। আমাদেরও তাই একটা স্বপ্ন আছে এবং এই স্বপ্নের প্রেরণায় আমরা উঠি, বসি, চলাফেরা করি, লিখি ও বলি এবং কাজকর্ম করি। সে স্বপ্ন বা আদর্শ কি? আমি চাই একটা নূতন সর্বাঙ্গীণ মুক্তি-সম্পন্ন সমাজ এবং তার উপরে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র। যে সমাজে ব্যক্তি সর্বভাবে মুক্ত হইবে এবং সমাজের চাপে আর নিষ্পিষ্ট হইবে না—যে সমাজে জাতিভেদের অচলায়তন আর থাকিবে না—যে সমাজে নারী মুক্ত হইয়া, সমাজে এবং রাষ্ট্রে, পুরুষের সহিত সমান অধিকার ভোগ করিবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবায় সমানভাবে আত্মনিয়োগ করিবে, যে সমাজে অর্থের বৈষম্য থাকিবে

১৩৩