পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আন্দোলন ও ব্যায়াম সমিতি প্রতিষ্ঠার সহায়তা করিতে হইবে। এই কর্মপদ্ধতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল এবং প্রত্যেক জেলা কংগ্রেস কমিটির নিকট পাঠানো হইয়াছিল। তখন কোনো আপত্তি শোনা যায় নাই; বরং সকলে অনুমোদন করিয়াছিলেন। কিন্তু বৎসর শেষে যখন দলের স্বার্থপোষণের জন্য অপরকে গালাগালি দেওয়া দরকার হইল তখন এই অভিযোগ আবিষ্কৃত হইল যে, আমরা নাকি যুব-সমিতিগুলি অধিকার করিবার চেষ্টা করিতেছি। আমাদের যদি কোনো অপরাধ হইয়া থাকে তাহা এই যে আমরা যুব-আন্দোলনের যথেষ্ট সেবা ও সহায়তা করি নাই। ফলে নিখিল বঙ্গীয় যুব-সমিতি নামে যে প্রতিষ্ঠান আছে তাহা দিন দিন নিষ্কর্মা হইয়া পড়িতেছে। বাংলার অনেক জেলায় স্থানীয় যুব-সমিতিগুলি যথেষ্ট কাজ করিতেছে কিন্তু যাঁহারা এই যুব-আন্দোলনের কর্ণধার বলিয়া পরিচয় দেন—সেই নিখিল বঙ্গীয় যুব সমিতির কর্তৃপক্ষেরা—এ কয় বৎসর যাবৎ কি করিলেন? বঙ্গীয় যুব-সমিতির মধ্যে কেহ কেহ অবশ্য যুব-আন্দোলনের বিষয়ে অনেক প্রোপাগাণ্ডা (propaganda) করিয়াছেন এবং তাঁহাদের সম্বন্ধে আমার এই উক্তি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু অধিকাংশ সভ্যেরা কি করিয়াছেন? কোনো কোনো প্রদেশে সেখানকার প্রাদেশিক যুব-সমিতি খুব কর্মঠ ও উৎসাহ-পরায়ণ, কন্তু বাংলা দেশে যুব-আন্দোলনের উৎসের মুখে যেন বাধা পড়িয়াছে। এবং এই উৎস হইতে মধ্যে মধ্যে যে বাণী নির্গত হয় তাহা অনেক সময়ে কংগ্রেসের অথবা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির বিরোধী।

 আর-এক প্রকার সমালোচনা আমরা মধ্যে মধ্যে শুনিতে পাই— আমরা নাকি অপরকে কাজ করিবার সুযোগ দেই না। কাজ করিবার সুযোগ কে কাকে দেয়? আমাদেরই বা কাজ করিবার সুযোগ কে দিয়াছে? যার ভিতরে মনুষ্যত্ব আছে সে নিজ শক্তিবলে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করিয়া লয়, মাতা যেরূপ শিশুর মুখে অন্ন তুলিয়া দেন—তার জন্য সেরূপ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করিয়া দিতে হয় না, কিন্তু আমরা সময়ে সময়ে রাজনৈতিক নাবালক সাজিয়া বলি যে আমরা কাজ করিবার সুযোগ পাইতেছি না— আমাদের কর্মক্ষেত্র কেহ আমাদের জন্য সৃষ্টি করিয়া দিতেছে না। যে ব্যক্তি ক্রমাগত অভিযোগ করে যে, যে কাজ করিবার সুযোগ অথবা কর্মক্ষেত্র পাইতেছে না—সে কস্মিনকালেও তাহা পাইবে না। এবং যে ব্যক্তি অভিযোগ না করিয়া কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয় তাহার সুযোগ বা কর্মক্ষেত্রের অভাব কোনো দিন হয় না। বাংলার

১৩৫