পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সভার কাজ পণ্ড করিবার জন্য বাহিরের লোক ও কতিপয় ছাত্র যেরূপভাবে আসিয়া আক্রমণ করিয়াছিল তাহা অতীব নিন্দনীয়। তার পূর্বে চট্টগ্রামে যে শোচনীয় দুর্ঘটনা ঘটিয়াছিল, যার ফলে শ্রীমান সুখেন্দুবিকাশ দত্তের মতো চতুর্দশ বৎসর বয়সের আদর্শ বালককে নিজের জীবন দিতে হইল— তাহা ভুলিবার নয়। সব গুণ্ডামির জন্য দায়ী কে, তাহা আমাদের অনুসন্ধন করা উচিত এবং অনুসন্ধানের পর আমাদের কর্তব্য স্থির করা উচিত। যেখানে এরূপ পাশবিকতা দেখা দিয়েছে সেখানে একতার নামে এ-সব ব্যাপারে ধামাচাপা দিয়া কোনো লাভ নাই। সমাজের দেহে গলদ যাহা আছে তাহা শোধন করিয়া ফেলা উচিত।

 দুঃখের বিষয় এই যে, যাহারা ভণ্ডামিকে আশ্রয় দেয়— তাহারা একবার ভাবিযাও দেখে না যে ইহার পরিণাম কি। প্রথমত যে ব্যক্তি অপরের উপর গুণ্ডামি করে তার জানা উচিত যে একদিন তাহার উপরও গুণ্ডামি হইতে পারে কারণ সব মানুষ সমানভাবে সহিষ্ণু ও অহিংস নয়। তারপর আর একটী কথা তার মনে রাখা উচিত যে, দেশের জনসাধারণ গুণ্ডামির অনুমোদন করে না। সুতরাং গুণ্ডামি যে করিবে সে যে সাধারণের সহানুভূতি ও ভালোবাসা হারাইবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। সুতরাং গুণ্ডামি আপনাকেই ব্যর্থ করিয়া থাকে।

 আজকাল যুব-আন্দোলন সম্বন্ধে যত লেখা বাহির হয় তার মধ্যে কখনও কখনও কেবল সমালোচনাই পাওয়া যায়—পথ নির্দ্দেশ পাওয়া যায় না। ফলে, তরুণ-সমাজের মধ্যে একটা অর্থহীন বিশৃঙ্খলার ভাব যেন আসিয়া পড়িয়াছে। মানুষ সবের মধ্যে কেবল দোষ এবং খুঁত দেখিতে শেখে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট কোনও নির্দেশ পায় না—কোন্ পথে চলা উচিত বা কাহাকে অনুসরণ করা উচিত। এ সম্পর্কে ‘দাদা কোম্পানির’ খুব উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। আমি নিজে এই কোম্পানীর সভ্য কোনোদিন ছিলাম না— আশা করি কোনোদিন হইব না। কিন্তু আমি বুঝিতে পারি না যে, যাহারা একদিন এই কোম্পানীর সভ্য ছিলেন তাহারা কেন দাদা কোম্পানির প্রতি এত বিরূপ হইয়াছেন? তাঁহাদিগের নিজেদের কোম্পানি এখন liquidation-এ গিয়াছে অথবা তাঁহারা এখন promotion লাভ করিয়া ঠাকুর-দাদার সোপানে উঠিয়াছেন— ইহাই কি তাঁহাদিগের অসন্তোষের কারণ? তাহা যদি হয় তবে তার জন্য দায়ী কে?

১৩৭