পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আজ বাংলার রাষ্ট্রীয় রঙ্গমঞ্চে দলাদলি ভীষণ আকারে দেখা দিয়াছে— ইহাতে দুঃখিত ও ব্যথিত হয় নাই এমন মানুষ বাংলা দেশে নাই। যদি কেহ থাকে তবে সে মনুষ্যপদবাচ্য নয়। কিন্তু ইহাতে হতাশ হইবাব কোনো কারণ আমি দেখি না। আমার গত ৮/৯ বৎসরের অভিজ্ঞতার ভিতরে তৃতীয়বার এই দলাদলি বাংলার রাষ্ট্রীয় গগন কালিমাময় করিয়া তুলিয়াছে। প্রথম ধাক্কা স্বয়ং দেশবন্ধুকে খাইতে হইয়াছিল, আমরা অবশ্য তাঁর পার্শ্বে ও পশ্চাতে ছিলাম এবং ধাক্কা খানিকটা আমাদের গায়ে লাগিয়াছিল। তখন শুনিতে হইয়াছিল দেশবন্ধুর শত্রুপক্ষের মুখে যে মাসিক ৫০,০০০ টাকার আয় পরিত্যাগ করিয়া তিনি পাঁচ হাজারি মন্ত্রীত্ব গ্রহণের জন্য ব্যাকুল হইয়াছেন; এবং এ কথাও শুনিতে হইয়াছিল যে চিত্তরঞ্জনকে তাঁহারা দেশছাড়া কবিবেন। দেশছাড়া তাঁহারা চিত্তরঞ্জনকে করিয়াছেন এ বিষয়ে সন্দেহ নাই—কারণ দেশবাসীর সঙ্গে লড়াই করিতে করিতে তাঁহাকে অকালে ইহলোক ত্যাগ করিতে হইল।

 দ্বিতীয় ধাক্কা খাইয়াছিলেন শ্রীযুক্ত সেনগুপ্ত প্রমুখ নেতৃবৃন্দ, তখন আমরা অনেকে কর্মক্ষেত্র হইতে বহু দূরে; কিন্তু প্রাচীরের অন্তরালে থাকিয়াও আমরা যে ফলাফলের জন্য অত্যন্ত উৎসুক্যের সহিত প্রতীক্ষা করিতেছিলাম এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। ফলে কংগ্রেসের জয় হইল। এবার তৃতীয় ধাক্কা আমরা নিজেরা সামনাসামনিভাবে খাইতেছি। ফল যে পূর্ববৎ হইবে এবং কংগ্রেসের জয় যে অবশ্যম্ভাবী সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। তবে দুঃখের বিষয় এই যে বিরোধের মীমাংসা হইবার পূর্বে অনেক গালাগালি আমাদের খাইতে হইবে এবং অনেক কষ্ট আমাদের সহিতে হইবে। এই বিরোধের মূলে যদি তৃতীয় পক্ষের কোনো হাত না থাকিত তাহা হইলে আমরা এত কষ্ট পাইতাম না।

 আর একটা তীব্র সমালোচনা মধ্যে মধ্যে আমাদের কানে আসে সেটা এই যে কংগ্রেস এতদিন ঝগড়া-বিবাদ ছাড়া আর কি করিল? আমাদের দেশে যাঁহারা Political minded— যাঁহাদের রাষ্ট্রীয় বুদ্ধি আছে তাঁহারা কিন্তু এ প্রশ্ন করেন না। এই প্রশ্ন করেন তাঁহারা, যাঁহারা মনে করেন যে দেশসেবার একমাত্র উদ্দেশ্য— হাসপাতাল নির্মাণ করা, সেবাসমিতি গঠন করা এবং বন্যা ও দুর্ভিক্ষের সময়ে আর্তের সেবা করা। তাঁহারা হাসপাতালের জন্য লক্ষ টাকা দিবেন কিন্তু স্বরাজ-লাভের জন্য ১৩০ টাকাও সানন্দে দিবেন না, তাঁহারা বলেন অমুক হাসপাতালে এতগুলি bill হইয়াছে, এতগুলি রোগীর চিকিৎসার আয়োজন

১৩৮