পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমাদের মধ্যে একদল লোক আছেন যাঁহারা “প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম” বলিয়া কেবল চীৎকার করেন কিন্তু তাঁহারা তলাইয়া দেখেন না যে নূতন মানুষ তৈয়ারি না করিলে সে প্রোগ্রামের মূল্য বুঝিবে কে?

 ১৯২৭ সাল হইতে এই প্রশ্নই আমার চিত্তকে আলোড়িত করিয়া আসিতেছে। নূতন প্রোগ্রাম আমারও একটা আছে—কিন্তু সে প্রোগ্রাম দিবার সময় এখনো আসে নাই—আসিবে সেইদিন, যেদিন নূতন মানুষ প্রস্তুত হইবে যাহারা সেই কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করিয়া তাহা কাজে লাগাইতে পারিবে। নূতন মানুষ তৈয়ারি করিবার চেষ্টায় আমি এখন নিরত। তাই গত দুই বৎসর ধরিয়া আমি ছাত্র আন্দোলন, যুব-আন্দোলন, নারী-আন্দোলন প্রভৃতি বিষয়ে এত জোর দিয়া বলিয়া আসিতেছি। এই-সব আন্দোলনের সাহায্যে যদি নূতন মানুষ পুরুষ ও নারী প্রস্তুত হয় তখন নূতন প্রোগ্রাম দিলে তার সার্থকতা হইবে।

 এই-সব আন্দোলনের ভিতর প্রাণসঞ্চার করিতে হইলে নূতন আদর্শ চাই। আমার আদর্শ—দেশের ও সমাজের সর্বাঙ্গীণ মুক্তি। সর্বাঙ্গীণ মুক্তির বাণী গ্রামে গ্রামে, নগরে নগরে, ঘরে ঘরে প্রচার করিতে হইবে। স্বাধীনতার প্রকৃত স্বরূপ কী তাহা সকলকে বুঝাইয়া দিতে হইবে। স্বাধীনতার অখণ্ড রূপ আমরা অনেকেই আজও উপলব্ধি করি নাই। অখণ্ড রূপের উপলব্ধি জাতির মানসক্ষেত্রে একদিনে আসে না। বহু দিনের সাধনার ফলে, এবং বহু বৎসর খণ্ড খণ্ড রূপ দেখিবার পর আমরা আজ অখণ্ড রূপের উপলব্ধি পাইতেছি। সমগ্র জাতিকে এখন বুঝাইয়া দিতে হইবে স্বাধীনতার অখণ্ড রূপ কী। যেদিন জাতি এই অখণ্ড রূপের উপলব্ধি লাভ করিবে সেইদিন জাতি পূর্ণভাবে মুক্ত হইবার জন্য পাগল হইয়া উঠিবে।

 পূর্ণ সাম্যবাদের উপর নূতন সমাজকে গড়িয়া তুলিতে হইবে। জাতিভেদের অচলায়তনকে একেবারে ধূলিসাৎ করিতে হইবে। নারীকে সর্বভাবে মুক্ত করিয়া সমাজে ও রাষ্ট্রে পুরুষের সহিত সমান অধিকার ও দায়িত্ব প্রদান করিতে হইবে; অর্থের বৈষম্য দূর করিতে হইবে এবং বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে প্রত্যেকে (কী পুরুষ কী নারী) যাহাতে শিক্ষার ও উন্নতির সমান সুযোগ ও সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করিতে হইবে। সমাজতন্ত্রমমূলক সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র যাহাতে স্থায়ী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য সচেষ্ট হইতে হইবে।

১৪১