পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রলয়ের ঝড় আমাদের মাথার উপর দিয়ে চলে গেল, বর্ষার দুর্যোগকে মাথায় করেও আমরা সমান দাঁড়িয়ে আছি। সুযোগ যখন এসেছে, ভাগ্যবিধাতা মুখ তুলে চেয়েছেন, তখন তো আর বসে বসে তর্কযুদ্ধ করে জাতির লজ্জা, দেশের দৈন্য, মনুষ্যত্বের অপমানকে দিন দিন বাড়ালে চলবে না।

 চেয়ে দেখো, যেখানে আমাদের সত্যকার দেশ, যেখানে আমাদের জীবনের আশা, ভরসা, উৎসাহ, মান, সম্পদ, সেখানে আমরা নাই। সেখানে—

"গভীর আঁধার ঘেরা চারিধার নিঝুম দিবস রাতি,
বুকের আড়ালে মিটি মিটি জ্বলে তৈলবিহীন বাতি।
গম ধরে আছে পাতাটি কাঁপে না, ছম ছম করে দেহ,
দেবতাবিহীন দেবালয় আজ, জনহীন সব গেহ।
মানষের দেহে প্রেতের নিত্য-রণতাণ্ডব সম,
আপন রক্ত আপনি শুষিছে নিষ্ঠুর নির্মম।”

 তাই আমাদের দেশের বেদনাময়ী মাতৃমূর্তি নয়ন জলে ছিন্ন অঞ্চল ভিজিয়ে আমাদেরই আশায় বসে আছেন।

 যেখানে জীবনের লীলাখেলার আনন্দের লুঠ হত, যেখানে সুখস্বাচছন্দ্যের উৎসগুলি প্রাচুর্যে আমাদের ভাণ্ডারে উপচে পড়ত, যেখানে জলে সুধা, ফলে অমৃত, শস্যে অনন্ত দেশের অনন্ত প্রাণদায়িনী শক্তি ছিল—সেখানে আজ বিরাট শ্মশান খাঁ খাঁ করছে— প্রেতের ছায়া দেখে অর্ধমৃত প্রাণ শিউরে উঠছে, লক্ষ লক্ষ চুলি দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে— এক বিন্দু, জল নাই, এতটুকু জীবন নাই।

 তোমরা জাগো ভাই, মায়ের পূজার শঙ্খ বেজেছে, আর তোমরা তুচ্ছ দীনতা নিয়ে ঘরের কোণে বসে থেকে না।

 এমন সুন্দর দেশ, এমন আলো, এমন বাতাস, এমন গান, এমন প্রাণ, আজি মা সত্যই বুঝি ডেকেছেন। ভাই, একবার ধ্যাননেত্রে চেয়ে দেখো, চারি দিকে ধ্বংসের স্তূপীভূত ভস্মরাশির উপর এক জ্যোতির্ময়ী মূর্তি। কী বিরাট! কী মহিমময়!

 শ্যামায়মান বনশ্রীতে নিবিড়কুন্তলা, নদীমেখলা, নীলাম্ববর-পরিধানা, বরাভয়বিধায়িনী সর্বাণী, সদা হাস্যময়ী, সেই তো আমার জননী। শারদ জ্যোৎস্নামৌলি মালিনী, শরদিন্দু নিভানিনা, অসুর-দর্প-খর্ব-কারিণী,